শিরোনাম
হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে হজ ফ্লাইটের টিকিট বুকিংয়ে দেরি করা, ফ্লাইটের নির্ধারিত আসন পূর্ণ করতে অসহযোগিতা এবং ফ্লাইটের সময়সূচি না মানার অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে এজেন্সিগুলোর অসহযোগিতায় শেষ মুহূর্তে হজ ফ্লাইট নিয়ে সংকটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে এজেন্সিগুলোকে সতর্ক করে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কয়েকটি এজেন্সিকে দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ।
সর্বশেষ এজেন্সিগুলোর অসহযোগিতার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানিয়েছে ঢাকার সৌদি দূতাবাস।
এই প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ সম্প্রতি হজযাত্রীদের বিমানে আসন বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে হজ এজেন্সির মালিক এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি/মহাসচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়, চলতি বছর হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ৩৫৯টি এজেন্সি এবং হাবের সভাপতি ও মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানানো যাচ্ছে যে, ঢাকার রাজকীয় সৌদি দূতাবাস এক জরুরি পত্রে জানিয়েছে, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের টিকিট রিজার্ভেশনে বিলম্ব করছে এবং এরই মধ্যে বুকিংকৃত হজ ফ্লাইটের যাত্রী প্রেরণে ফ্লাইটের সময়সূচি মানছে না। এতে সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ও মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভের কার্যক্রম বাস্তবায়নে কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করছে। তাদের এ ধরনের অবহেলার কারণে হজ ফ্লাইট বাতিল হলে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হবে।
রাজকীয় সৌদি দূতাবাস এ বিষয়ে বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় হজ এসেন্সিসমূহকে হজ ফ্লাইটের পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি কঠোরভাবে অনুসরণ এবং প্রতিটি হজ ফ্লাইটের সব আসন পূর্ণ করার অনুরোধ জানিয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছেও বিষয়টি প্রথম থেকেই অনুমিত হচ্ছিল। সে কারণে প্রতিটি হজ এজেন্সিকে এ বিষয়ে একাধিকবার পত্র দিয়ে আসন রিজার্ভেশনসহ প্রতি ফ্লাইটের আসন সক্ষমতা পূর্ণ ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু এজেন্সিগুলোর এ বিষয়ে সহযোগিতার অভাব লক্ষণীয় পর্যায়েই রয়ে গেছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে বিষয়টির আশঙ্কা করছিল রাজকীয় সৌদি দূতাবাসের পত্রে যা আরও স্পষ্ট হয়েছে তা হলো- আসন খালি নিয়ে ফ্লাইট উড্ডয়ন করলে এবং নির্ধারিত ফ্লাইট যাত্রীর অভাবে বাতিল হলে শেষের দিকে এসে অনেক যাত্রী ফ্লাইট সংকটের কারণে সৌদি আরব গমন করতে পারবেন না। তখন তারা শোডাউন করার চেষ্টা করবে যাতে চলমান সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় এবং সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ বছর হজ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া প্রতিটি হজ এসেন্সিকে তাদের হাজীদের (যারা এখনো সৌদি আরব যাননি) বিপরীতে নির্ধারিত এয়ারলাইন্সের আসন রিজার্ভ করে সেই তথ্য ছক অনুযায়ী হজ অফিসের পরিচালকের কাছে পাঠানোর জন্য এজেন্সিগুলোকে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
কোনো এজেন্সির অবহেলা বা গাফলতির কারণে কোনো হজযাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজে যেতে ব্যর্থ হলে ওই হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ‘হজ ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’-এর বিধান অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে মোহাম্মদপুর হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের (হজ লাইসেন্স নং-১৪২২) মালিক মোহাম্মদ নাসিম খান এবং সাউথ এশিয়ান এয়ার বাংলাদেশের (হজ লাইসেন্স নং-১২২১) মালিক আবি আবদুল্লাহকে সৌদি এয়ারলাইন্সের বুকিং করা টিকিট বাতিল করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
নোটিশে বলা হয়, তারা সৌদি এয়ারলাইন্সের বুকিংকৃত ১৩২ ও ৫৭টি টিকিট বাতিল করেছেন, যা হজ ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ অন্তরায় ও হজ ব্যবস্থানায় বিঘ্ন সৃষ্টির শামিল।
তাদের বিরুদ্ধে কেন হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘনের দায়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- তা আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে নোটিশে।
সৌদি এয়ারলাইন্সে গত ১১ জুনের জন্য ১০৬টি সিট বুকিং দিয়েও কোনো ধরনের যোগাযোগ না করা ও পরবর্তী সময়ে তারিখ পরিবর্তন করে ১৭ জুন নির্ধারণ করা হলেও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করা বা ফোন না ধরার অভিযোগ উঠেছে হজ এজেন্সি এস আবরার ট্রাভেলসের (হজ লাইসেন্স নং-১১২৮) মালিক মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে। এজন্য গত ১২ জুন তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এছাড়া সৌদি আরব যেতে সৌদি এয়ারলাইন্সের ১৭টি হজ ফ্লাইটে ৪ হাজার ৮টি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৬টি ফ্লাইটে এক হাজার ৩৩৫টি আসন খালি রয়েছে বলে এজেন্সিগুলোকে জানানো হয়েছে।
এজেন্সিগুলোকে খালি আসনে দ্রুত বিমান টিকিট বুকিং নিশ্চিতের অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর কোটা ৪ হাজার জন। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কোটা ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন।
এ পর্যন্ত সৌদি গেছেন ৯৬০৬ জন
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইটি হেল্পডেস্ক হজ সম্পর্কিত প্রতিদিনের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, সোমবার (১৩ জুন) পর্যন্ত ৯ হাজার ৬০৬ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার ৩ হাজার ৩৮৩ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী ৬ হাজার ২২৩ জন।
সোমবার পর্যন্ত সৌদি আরবে মোট হজ ফ্লাইট গেছে ২৪টি। এরমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৪টি, সৌদিয়ার ৬টি এবং ফ্লাইনাসের ৪টি ফ্লাইট রয়েছে।
হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট গত ৫ জুন শুরু হয়েছে। সৌদি আরবে যাত্রার শেষ ফ্লাইট ৩ জুলাই। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১৪ জুলাই। ফিরতি ফ্লাইট শেষ হবে ৪ আগস্ট।