শিরোনাম
মিয়ানমারে সেনা নিপীড়ন, হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি দাতাগোষ্ঠীগুলোর সহায়তা ও সমর্থন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সূত্র: জাগো নিউজ
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বা যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদানের বিপরীতে পাওয়া গেছে ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) এ অর্থ দেয় দাতারা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাতাগোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য ২৬২ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংস্থাটি। গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য ১৮ কোটি ডলার অনুদান ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আফগানিস্তানে নতুন করে মানবিক সংকট আর প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে দাতারা রোহিঙ্গাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারা বলছেন, যে হারে বৈদেশিক সহায়তা কমছে, তাতে শিগগিরই ১০ লাখ রোহিঙ্গার দায়িত্ব বাংলাদেশের ঘাড়ে পড়তে পারে।
জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত কোনো বছরই রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার জন্য চাহিদার পুরো অর্থ আসেনি। ২০১৯ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা অর্থায়ন আগের বছরের তুলনায় অব্যাহতভাবে কমছে। এ বছরের প্রথম আট মাসে চাহিদার মাত্র ৩৪ শতাংশ অর্থ নিপীড়িত-বিতারিত এ জনগোষ্ঠীর জন্য এসেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুজিত কুমার দত্ত বলেন, আফগানস্তান ইস্যু একটা বড় প্রভাব রেখেছে। আমেরিকা যখন সেখান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে, এর পরবর্তীতে সেখানে মানবিক জীবনযাপন শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটা অনেকাংশে দুর্বল হয়ে গেছে আফগানস্তানের মানবিক বিপর্যয়ের কারণে। আরেকটি ব্যাপার হলো, দাতারা দেখতে পারছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান না। রোহিঙ্গাদের কবে নাগাদ আমরা প্রত্যাবাসন করতে পারবো, সে বিষয়ে কোনো রোডম্যাপ তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে, বিশ্ব সম্প্রদায় কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় অনুদান কমে যাওয়ার বাস্তব উদাহারণ এখন রোহিঙ্গা ক্রাইসিস।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেরাই একটা জনবহুল দেশ। আমাদের অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। ডোনাররা যদি এখন অনুদান কমিয়ে দেয় তাহলে বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ করতে হবে। এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করবে বলে আশা প্রকাশ করছি।
আইএসসিজি বলছে, জেআরপির অর্থের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ হয়েছে সমন্বয় ও কর্মী স্বাস্থ্য খাতে। অন্যদিকে কোনো অর্থই বরাদ্দ দেওয়া হয়নি লজিস্টিকস বা পরিচালন খাতে। সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা ও ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন খাতে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে চাহিদার ৭৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬৯ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৬৯ শতাংশ এবং ২০২০ সালে চাহিদার ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থ সহায়তা পেয়েছে রোহিঙ্গারা।