শিরোনাম
রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার সাংবাদিকদের বলেছেন, গ্রেফতার মো. মাসুম ওরফে আকাশের একমাত্র ‘টার্গেট ছিলেন’ রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু।
মাসুম যখন গুলি করছিলেন, তখন অস্ত্রের ট্রিগার চেপে ধরে রেখেছিলেন। সেই গুলিতে টিপুর সঙ্গে নিহত হন রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি। আর এই ঘটনা পরে জেনেছেন মাসুম।
প্রীতি হত্যার বিষয়ে মাসুম কী জানিয়েছেন- এমন প্রশ্নে ডিবি প্রধান জানান, মাসুম তাদের বলেছেন, ‘অস্ত্রের ট্রিগার চেপে রেখেছিলাম, প্রীতির গায়ে যে গুলি লেগেছে তা জানতাম না।’
ডিবি প্রধান জানান, ঘটনার সময় ট্রিগার টিপেই রেখেছিলেন মাসুম। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বের হয়। এরপর তিনি তার সহযোগীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যান।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রীতি নিহতের বিষয়ে মাসুম আগে জানতেন না, পরে জেনেছেন বলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি, তাই কীসের ভিত্তিতে আপনারা (ডিবি) বলছেন মাসুম টিপুকে হত্যা করেছে?
এমন প্রশ্নে ডিবি প্রধান বলেন, অস্ত্র হলো একটি ঘটনার আলামত। ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। এরপর ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করি প্রধান আসামিকে। একটি কিলিং হওয়ার পরে সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করে। আমরা রাত-দিন কাজ করে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিকে ধরি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিও ঘটনা স্বীকার করেছেন। এছাড়া আসামি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।
টিপু হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক না কি কোনো সন্ত্রাসী কিলিং মিশন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ৩-৪টি বিষয় নিয়ে আগাচ্ছি। রাজনৈতিক না সন্ত্রাসী তা পরে জানানো হবে।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, গ্রেফতার মাসুম হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৪-৫টি মামলা রয়েছে। সে ফেরারি আসামি। এ কারণে বাড়ি যেতে পারতেন না। তবে তার মুখের কথাই সব সত্য এমন নয়, তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।
ঢাকা সেন্ট্রাল ডিপো থেকে কাট-আউট সিস্টেমে একটি মোটরসাইকেল ও একটি পিস্তল ব্যাগে করে নিয়ে আসেন মাসুম।
এ তথ্য জানিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, মাসুমের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তার নাম এখনই বলা যাবে না। হত্যাকাণ্ডে দুজন অংশগ্রহণ করেন। একজন মোটরসাইকেলচালক আরেকজন মাসুম।
ডিবি প্রধান বলেন, মাসুম একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনে পড়ালেখা করেছেন। তার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। তার স্ত্রী-সন্তানও রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে কয়েকজনের নাম আমাদের কাছে বলেছেন মাসুম।
এর আগে গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় তিনি নিজ গাড়িতে করে বাসায় যাচ্ছিলেন।
গাড়ি যানজটে পড়ার পর মোটরসাইকেলে আসা হেলমেট পরা এক যুবক টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এলোপাতাড়ি গুলিতে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও হন গুলিবিদ্ধ।
নিহত প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন ঘটনার পর কান্না করতে করতে বলেন, বিচার চাইয়া লাভ নেই। নিরীহ মানুষ আমরা। সাধারণ জীবন-যাপন করি। আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। ভালো থাকার চেষ্টা করি। বিচার চাওয়ার কিছু নেই। যার কাছে চাওয়ার, তার কাছেই চাইতে হয়। মানুষের কাছে কি চাইবো। আল্লাহ যেন মানুষকে হেদায়েত দেন, শান্তি দেন।
তিনি বলেন, কোনো বাবা-মা’ই সন্তানের এভাবে মৃত্যু চায় না। এটা সহ্য করার মতো না। কী করবো বলেন।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। সবশেষ রোববার ভোরে বগুড়া থেকে গ্রেফতার হন মাসুম ওরফে আকাশ।
সূত্র: জাগো নিউজ