ছেঁউড়িয়ায় শুরু হলো ৩ দিনের লালন স্মরণোৎসব

ফানাম নিউজ
  ১৫ মার্চ ২০২২, ১৩:৪০

গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতা থাকায় কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর আঁখড়াবাড়ীতে ছিল না লালন স্মরণোৎসব ও লালন তিরোধান দিবসের কোনো আয়োজন।

সাধু ভক্তদের মিলনমেলায় পড়েছিল ভাটা। মহামারী সংকট কাটিয়ে এ বছর আবারও কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আজ বসছে দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ৩ দিনের লালন স্মরণোৎসব।

এবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে লালন একাডেমি।

লালন অনুসারী হৃদয় শাহ ফকির বলেন, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্ এর এই আধ্যাত্মিক বাণীর স্লোগানে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে এ উৎসব চলবে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত।
 
তবে এই লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকতার সময়কাল নিয়ে প্রকৃত লালন অনুসারী ও ভক্তদের মাঝে রয়েছে অসন্তোষ। কারণ প্রকৃতার্থে যে দোল পূর্ণিমাকে ঘিরে এই দোলোৎসব, সেই দোলোৎসবের মূল লগ্নকালের সময়সীমা হলো- ১৭ মার্চ দুপুর থেকে ১৮ মার্চ দুপুর পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে আগত বাউল অনুসারী ভক্তবৃন্দ তাদের নিজস্ব ঘরানায় চিরায়ত আচার অনুষ্ঠান পালন করবেন। সে কারণে প্রকৃত বাউল সাধু ভক্ত আশেকানদের অনেকেই সাইজির এই তীর্থধামে আসবেন আগামীকাল বুধবার বিকেল থেকে।

লালন একাডেমির সদস্যসচিব সেলিম হোসেন বলেন, বাউল সম্রাট লালন শাহ্ তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দোলপূর্ণিমা রাতে বাউলদের নিয়ে সাধুসঙ্গ উৎসব করতেন।

১২৯৭ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক তার মৃত্যুর পরও এ উৎসব চালিয়ে আসছেন তার অনুসারীরা।

ইতিমধ্যে এ উৎসবকে ঘিরে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার কালি নদীর তীরে লালন আঁখড়াবাড়ীর মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। সেই সঙ্গে দুই বছর পরে সাধু ভক্তরা গুরু শিষ্যের মিলনমেলায় সমবেত হতে পারবেন বলে তারাও খুশি।

তিন দিনের এ আয়োজনে সাধু গুরু ভক্ত শিষ্যদের মাঝে লালন দর্শন ভাবাদর্শে চিরায়ত আনুষ্ঠানিকতার বাইরে প্রতিদিনই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে আয়োজকেরা।

উদ্বোধনী দিন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে লালন মঞ্চে আলোচনা সভা শেষে গভীর রাত পর্যন্ত লালন একাডেমির বাউল শিল্পীরাসহ দেশের ও ওপার বাংলা থেকে আগত বিভিন্ন প্রখ্যাত বাউল শিল্পীদের পরিবেশনায় চলবে বাউল গানের অনুষ্ঠান।

সেই সঙ্গে আখড়া বড়ি সংলগ্ন কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলবে গ্রামীণ মেলা।

১৫ মার্চ মঙ্গলবার প্রথম দিনের আলোচনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন, এনডিসি।

১৬ মার্চ বুধবার দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি।

১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার শেষ দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ, এমপি।

তিন দিনের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ. সাইদুল ইসলাম।

সেই সঙ্গে উৎসব চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন আলোচনা সভা শেষে দেশ বরেণ্য লালন গানের শিল্পী, লালন একাডেমির শিল্পীসহ গুণী সংগীত শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম জানান, ‘তিন দিনব্যাপী এ লালন স্মরণোৎসবকে ঘিরে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি, র‌্যাব, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন।’

সূত্র: দেশ রূপান্তর