ডিএমপি কমিশনার হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে যারা

ফানাম নিউজ
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:১৩

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে জনমুখী পুলিশি সেবার অনন্য উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দু’বছর পূর্ণ করেছেন মোহা. শফিকুল ইসলাম। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ডিএমপির ৩৪তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া শফিকুল ইসলাম অবসরে যাচ্ছেন আগামী ৩০ অক্টোবর। সে হিসেবে তিনি রাজধানীর পুলিশপ্রধানের দায়িত্বে আছেন আর মাত্র এক মাস। এ অবস্থায় কে হচ্ছেন তার স্থলাভিষিক্ত- তা নিয়ে এরই মধ্যে শীর্ষ মহলে চলছে আলোচনা। সূত্র: জাগো নিউজ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ডিএমপি কমিশনারের পদটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদগুলোর মধ্যে একটি। এরই মধ্যে কমিশনার হওয়ার দৌড়ে কয়েকজনের এগিয়ে থাকার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্য থেকেই একজন হতে পারেন ৩৫তম নতুন ডিএমপি কমিশনার।

এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলছেন না। তবে ডিএমপি মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিএমপি কমিশনারের পদটি অতিরিক্ত আইজিপি সমমর্যাদার। এটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদ। দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিই এ পদে দায়িত্ব পাবেন।

সূত্র জানায়, ঢাকার কমিশনার হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে নৌ-পুলিশের প্রধান হিসেবে কর্মরত। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে তার কমিশনার হওয়ার আলোচনা সবচেয়ে বেশি।

আতিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৬ সালে রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার জুম্মাপাড়ায়। তিনি আইপিজিএমআর (ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ) বর্তমানে বিএসএমএমইউ থেকে ফার্মাকোলজি বিষয়ে স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিসিএস-১২ ব্যাচের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯১ সালে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন আতিকুল ইসলাম। বেসিক ট্রেনিং শেষে শিক্ষানবিশ এএসপি হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় যোগদান করেন। এরপর সহকারী পুলিশ কমিশনার ও উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালে ডিআইজি (হাইওয়ে) হন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি নৌ-পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত।

বাংলাদেশ পুলিশে অসাধারণ ও দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ছয়বার আইজি ব্যাজ, দু’বার বিপিএম সার্ভিস, দু’বার পিপিএম (সেবা) (গ্যালান্ট্রি) অর্জন করেন।

আতিকুল ইসলাম ব্যক্তিজীবনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ।

ডিএমপি কমিশনার হওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি গোপালগঞ্জ সদর থানার অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর মরহুম এস এম আব্দুল খালেকের সন্তান।

এস এম রুহুল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৯০ সালে ১২তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন।

২০০৩ সাল থেকে রাজবাড়ী, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৩১ মার্চ তিনি রাজবাড়ী জেলার সন্ত্রাস দমন ও মাদক উদ্ধারে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন তিনি। ঝালকাঠিতে পুলিশ সুপার হিসেবে অপরাধীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হন।

তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার, ঢাকায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

ডিএমপি কমিশনার হতে পারেন- এ তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে শোনা যাচ্ছে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এম খুরশীদ হোসেনের নাম।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর এ সন্তান ১২তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে (পুলিশ ক্যাডার) প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে খুরশীদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম অর্জন করা খুরশীদও হতে পারেন ৩৫তম ডিএমপি কমিশনার।

ঢাকার পুলিশপ্রধান হওয়ার দৌড়ে উল্লিখিত তিন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক পুলিশ কর্মকর্তার নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। বাড়ি গোপালগঞ্জ। কমিশনার পদে কোনো চমক থাকলে বিসিএস ১৭তম ব্যাচের জুনিয়র এ কর্মকর্তাও হতে পারেন নতুন ডিএমপি কমিশনার।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নামও রয়েছে সম্ভাব্য কমিশনারদের তালিকায়। বিসিএস ব্যাচ বিবেচনায় পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক ও অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে রাখছেন হাবিবুর রহমান।

১৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদানের পর কর্মক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দু’বার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের এ ডিআইজি।

এছাড়াও তার একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, যা এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এ উদ্যোগ। এমনকী এ পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায় রাজধানীর বেদে সম্প্রদায় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর অনেকের সামাজিক অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে।

সমাজের অবহেলিত এ জনগোষ্ঠীর করুণ বাস্তবতায় নিজের অবস্থান থেকে ত্রাতা হয়ে যথাসাধ্য এগিয়ে আসেন ডিআইজি হাবিবুর।

এখন সময়ই বলবে কে হচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পরবর্তী অভিভাবক।