শিরোনাম
নিরাপত্তারক্ষীর ছদ্মবেশ নেয় একটি চক্র। প্রথমে ভুয়া পরিচয়ে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরিতে যোগ দেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন মার্কেটে কাজের দায়িত্ব পায় তারা। তারপর সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে মার্কেটের একাধিক স্বর্ণের দোকানে চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে এমন অভিনব উপায়ে একের পর এক দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনার পর বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
রাজধানীর প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নিজেদের এলাকার প্রতিটি স্বর্ণের দোকান কিংবা মার্কেটৈর নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের বিস্তারিত তথ্য থানায় সংরক্ষণ করতে বলেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকায় রজনীগন্ধা মার্কেটের দুটি স্বর্ণের দোকানের তালা ভেঙে তিন শতাধিক ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়। এ ঘটনার তদন্তে নেমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সম্প্রতি মঞ্জুরুল হাসান শামীম নামে চোর চক্রের একজন সদস্যকে গ্রেফতার করে। সে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তার চক্রের দুই সদস্য মনির ও আলম ছদ্মনামে বেস্ট সিকিউরিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়। তারপর সুযোগ বুঝে তারা স্বর্ণের দোকানে চুরি করে পালায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রজনীগন্ধা মার্কেটে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি নেওয়া চোর চক্রের দুই সদস্যের প্রকৃত নাম হলো মাসুদ ও ইলিয়াস। চক্রটি এর আগে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ডেমরার হাজী হোসেন প্লাজা মার্কেটের নিউ কেয়া জুয়েলার্সের তালা ভেঙে ২৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দেড় লাখ টাকা চুরি করেছিল। দুর্ধর্ষ ওই চুরির ঘটনার দেড় মাস আগে মনির, আলম ও জাহিদ নামের তিন ব্যক্তি স্থানীয় লায়ন সিকিউরিটি সার্ভিসের মাধ্যমে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিল।
গোয়েন্দা পুলিশের ডেমরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল জানান, তিন জন নিরাপত্তারক্ষী এই চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে তথ্য পেয়েছেন তারা। পরে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটি কোম্পানিতে গিয়ে ওই তিন জনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, তারা ভুয়া পরিচয় দিয়ে চাকরি নিয়েছিল। কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা মার্কেটে চুরি করা ব্যক্তিরাই হোসেন মার্কেটে চুরি করেছিল। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে বিষয়টি শনাক্ত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদেও গ্রেফতার হওয়া শামীম এটি স্বীকার করেছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি নিয়ে স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনা ঠেকাতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ডিএমপি কমিশনার একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। ঢাকার আটটি ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি প্রত্যেক এলাকার স্বর্ণের দোকান, স্বর্ণের মার্কেট এবং স্বর্ণের দোকান আছে এমন মার্কেটে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ড বা পাহারাদারদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে সেসবের সত্যতা এবং তাদের প্রাক-পরিচিতি যাচাই করার কপি প্রতিটি থানায় সংরক্ষণ করতে বলেছেন। একইসঙ্গে একটি কপি ডিএমপি সদর দফতরে পাঠানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, গুলশান এলাকার প্রতিটি স্বর্ণের দোকান আছে এমন মার্কেট বা দোকানদারদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া নতুন কেউ নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত হলেই তার ব্যক্তিগত তথ্য থানায় জমা দেওয়ার জন্য সব দোকান ও মার্কেটের দায়িত্বরত লোকজনকে বলা হয়েছে।
ডিএমপি’র একজন কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, সম্প্রতি কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা মার্কেটে যে চক্রটি দুর্ধর্ষ চুরি করেছিল সেই দলেরই একজন সদস্য গুলশানের পিংক সিটিতে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে যোগ দিয়েছিল। নাম-পরিচয় যাচাই করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন