শিরোনাম
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গি দমন আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। কেননা জঙ্গি দমন নিয়ে কোথাও কোনো প্রশ্ন উঠেনি। এছাড়া খেলাধুলাসহ আন্তর্জাতিক যত ইভেন্ট হয়েছে তা শৃঙ্খলার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে পেরেছি। আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। নগরীতে অপরাধ করে কেউ ঘাপটি মেরে বসে থাকার প্রবণতাকে সংকুচিত করে এনেছি। অপরাধ প্রতিরোধে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। রাতের বেলা ছিনতাই হয়, টানা পার্টি নারীদের গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ধরনের অপরাধ করেও কেউ পার পাচ্ছে না। অপরাধ সংঘটনের পরপরই অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছি। অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটনে ৯০ শতাংশের বেশি সফলতা রয়েছে। ঘটনা ঘটার সপ্তাহ খানেকের ভেতরেই আমরা সব রহস্য উদ্ঘাটন করছি। ডিএমপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার নিজ অফিসকক্ষে একান্ত আলাপচারিতায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিএমপিতে কর্মরত কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার মাদকসেবনকারী ১১৩ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাকি সাতজনের বিষয়টি আপিল পর্যায়ে রয়েছে। যখন জানতে পারলাম, আমাদের পুলিশ সদস্য মাদক সেবন করছে। ব্যারাকে মাদকও বিক্রি করছে। তখন আকস্মিকভাবেই ডোপ টেস্ট শুরু করি। প্রথমে সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ডেকে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তারা অস্বীকার করে। তাদের এও বলা হয়-যদি সঙ্গদোষ বা ভুল করে মাদক সেবন করে থাকো তাহলে সেটি স্বীকার কর। প্রয়োজনে ছয় মাসের ছুটি নাও, বাড়িতে যাও। তারপর মাদকমুক্ত হয়ে চাকরি করো। কিন্তু তারা মাদক সেবনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। পরে ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। তাই বিধি অনুযায়ী, ডোপ টেস্টে ধরা পড়া মাদকাসক্তদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদকাসক্ত যেসব পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের নজরদারিতে রাখতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে বলা হয়েছে। কেননা চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এরা যে কোনো বড় ধরনের অপরাধ করতে পারে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্ট করা প্রসঙ্গে মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ইউনিট ইনচার্জকে সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে। ইউনিট ইনচার্জ ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে মাদকাসক্ত বলে সন্দেহ হলে তিনি বিষয়টি অবহিত করবেন। তখন ওই কর্মকর্তার ডোপ টেস্ট করানো হবে। অফিসারদের আচরণ দেখতে আমাদের একটি বিভাগই রয়েছে। এক্ষেত্রে আমি পক্ষপাতিত্ব করিনি। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে চাই।
ডিএমপিকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা আরও বাড়াতে ডিবিতে একটি ল্যাব তৈরি করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকবে এই ল্যাবে। এতে সহজে অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হবে। একটি তথ্য পেলেই তা দিয়ে সহজে অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পোশাকের ছেঁড়া কোনো অংশ, কোনো কাগজের টুকরো, মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট কিংবা এরকম কোনো অংশবিশেষ দিয়ে সহজে একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ওই অপরাধী দেশের কোন কোন জায়গায় কি ধরনের অপরাধ কর্ম করেছে, সেটিও বেরিয়ে আসবে। তবে এই ল্যাব প্রক্রিয়াধীন। শিগগির এটি করা হবে।
তিনি বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মহানগরীরর ১০০ জায়গায় সিসিটিভি বসানো হয়েছে, আরও শতাধিক জায়গায় বসানো হবে। এতে করে কেউ অপরাধ করে সহজে পার পেয়ে যেতে পারবে না। তখন ছিনতাইকারী ছিনতাই করে পালানোর সময় সিসিটিভি সংকেত দেবে।
ঢাকা শহরের ‘যানজট’ নিয়ে কমিশনার বলেন, প্রতিদিন ৩শর কাছাকাছি যানবাহন ঢাকায় যুক্ত হয়। আবার প্রতিটি রাস্তায় কম-বেশি উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এতেও যানজট হচ্ছে। অবশ্যই ট্রানজিট তৈরি করা ছাড়া নগরীর যানজট নিরসন সম্ভব নয়। তবে রাতের বেলায় হোক কিংবা দিনের বেলায় হোক, যানজট নিরসনে পুলিশ সব সময় রাস্তায় নিয়োজিত থাকছে। আমরা মনে করি, আপনাকে আগে বাসায় পৌঁছে দিতে পারলে আমিও আগে স্ত্রী-সন্তানের কাছে যেতে পারব। সেই মন-মানসিকতা নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। ডিএমপিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে ৫৪ শতাংশ পথচারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানীর ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে হাঁটার সুযোগ নেই। এগুলো কারও না কারও দখলে থাকে।
থানা পুলিশ মামলা না নেওয়া প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, পুলিশের একটি কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ডাকাতি-ছিনতাই মামলা নিতে চায় না। অথচ মামলা নেওয়ার জন্যই সরকার আমাদের ভেতন-ভাতা দিচ্ছে। কেউ মিথ্যা মামলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। তবে মামলা নিতেই হবে। থানা পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।
সূত্র: যুগান্তর