শিরোনাম
গণভবনের ভেতরে অন্ধকার। প্রায় ১৫০ কর্মী গণভবনের ভেতরের পুকুর পরিষ্কার করা ছেড়ে এক জনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। কথা বলার ফাঁকে এদের মধ্যে এক জন বলে উঠলেন, ‘মা, বিশ্বাস হচ্ছে না, আপনার সঙ্গে কথা বলছি।’ উত্তর যিনি দিলেন তিনি বললেন, বিশ্বাস না হওয়ার কী আছে! আমি শেখ হাসিনা। সূত্র: ইত্তেফাক
তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত যারা তাদের বেষ্টনী ভেঙে মাঝে মাঝেই তিনি চলে আসেন মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষের নেত্রী। আমাকে দূরের মানুষ করো না।’
মানুষের জন্যই প্রতিদিনের প্রতিটি ক্ষণকে কাজে লাগানোর পণ তার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেন জাতির পিতার স্বপ্নকে সফল করার প্রত্যয়েই এগিয়ে চলেছেন। তাই দেশের সাধারণ মানুষ ভালোবেসে তাকে ডাকেন ‘শেখের বেটি’। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাঙালিয়ানার ধারক। সহজ নিরাভরণ জীবন যাপন করেন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। দেশের প্রতিটি খাত নিয়ে তার একটা পরিকল্পনা রয়েছে। সেই পরিকল্পনা মতো তিনি এগিয়ে চলেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত মানবিক ও আন্তরিক। রাষ্ট্র পরিচালনার মতো ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও তিনি প্রতিটি অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ততার মধ্যেও শেখ হাসিনা সাহিত্য চর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। প্রতি বছর বইমেলায় তার রচিত গ্রন্থ প্রায় নিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
গণভবন সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় তার। এরপরে কোরআন তেলাওয়াত করেন। ফজরের নামাজ শেষ করে চা-নাস্তা খাওয়ার পাশাপাশি সংবাদপত্র পড়েন। কখনো প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতা উদার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদৃষ্টি তাকে করে তুলেছে এক আধুনিক, অগ্রসর রাষ্ট্রনায়কে। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় তিনি দিন বদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কান্ডারি। এই অভিযাত্রায় তিনি বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং ভরসাস্থল। অথচ ব্যক্তি শেখ হাসিনা যেন খুব সাধারণ একজন মানুষ। সেই সঙ্গে তার সেই সাধারণ মানুষ হওয়াই যেন আমাদের কাছে তিনি আরো বেশি সম্মানের, শ্রদ্ধার মানুষ হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের আনাচেকানাচে থাকা নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তাদের কথা দরদ নিয়ে শোনেন। অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী তিনি। কিছু্ ভোলেন না। আর কোনো সময় নষ্ট করেন না।
রাষ্ট্র পরিচালনার সীমাহীন ব্যস্ততার মধ্যেও প্রচুর বই পড়েন প্রধানমন্ত্রী। ভালোবাসেন কবিতা পড়তে। সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে সেলিনা হোসেন, হরিশংকর জলদাস, আনিসুল হকের লেখা পড়েন। গান শোনেন। রবীন্দ্রসংগীত তার পছন্দ। পছন্দের গান ‘ধন ধান্যে পুষ্পেভরা’।
বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য কেন প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ জীবন প্রয়োজন তারই ব্যাখ্যা দিলেন শহিদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। বললেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছেন। আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন তা শেখ হাসিনা না থাকলে কখনোই সম্ভব হতো না। আমরা ২১ বছরের দুঃশাসন দেখেছি। দেখেছি দেশ কীভাবে তলিয়ে যাচ্ছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বাংলাদেশও আমরা দেখছি। জাতিসংঘে বারবার পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণেই দেশ থেকে মঙ্গা দূর হয়েছে, অভাব দূর হয়েছে। দক্ষ হাতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে চলেছেন। যদি তিনি দীর্ঘ সময় দেশ পরিচালনা করতে পারেন, যদি তিনি নেতৃত্বে থাকেন তবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব। আমার একটাই চাওয়া আল্লাহতায়ালা শেখ হাসিনাকে যেন দীর্ঘ জীবন দান করেন।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বিএসএস) প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে কাজ করেছেন। ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার জীবনের ব্রতই হচ্ছে মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। আমরা এবারও দেখলাম জাতিসংঘে তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে। এসডিজির যে অগ্রগতি তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এসব প্রাপ্তির মূল কারণ হচ্ছে, তিনি সবসময় দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। শেখ হাসিনার ওপরে ২১ থেকে ২২ বার সরাসরি হামলা করা হয়েছে। একটি ভয়াবহ হামলার সময় আমি তার সঙ্গে ছিলাম। তখন দেখেছি তার অদম্য সাহস। অকুতোভয় মানসিকতা। গোলাগুলির মধ্যেও তিনি ভয় পাননি। বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। এই অকুতোভয় মানসিকতাই শেখ হাসিনার শক্তি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, পিতা-মাতাসহ পরিবার হারানো শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনেতা থেকে বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। তার এ পথচলা খুব সহজ ছিল না। অদম্য সাহস আর দৃঢ়তা দিয়ে তিনি দেশকে এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আমরা নারীরা তার সাহস থেকে প্রেরণা পাই, সাহসী হয়ে পথ চলি।
বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী তীরবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুত্ফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলেপিঠে মধুমতী নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। তারা পাঁচ ভাইবোন। অপর চার জন হচ্ছেন :শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। ভাইবোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া সবাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের হাতে নিহত হন। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষই যেন তার বৃহৎ পরিবারের পরিণত হয়েছে।
দিবসটিতে যত কর্মসূচি
জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়াও একই দিন কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার (মেরুল বাড্ডা), ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে (২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২.০১ মিনিটে) খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস চার্চে, সকাল ৬টায় তেজগাঁও জকমালা রানির গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। আজ বিকাল ৫টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।