শিরোনাম
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, একজন শিক্ষাবিদ, লেখক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক। দক্ষিণ এশিয়ার ফিলিপ কটলার খ্যাত এই শিক্ষাবিদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়ার ৮ বছরের সঙ্গী থাকার পর বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে (মার্কেটিং) ফিরেছেন তিনি।
এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ-৫ এর বিপরীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা, শাবিপ্রবির সংকট নিরসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
প্রশ্ন: জিপিএ-৫ পেয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন না প্রায় এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পেলে সমস্যা কি? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আছে না। জিপিএ-৫ পেলেই তো আর একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নেওয়া হয়। এখন ভর্তি পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হবে, তারাই ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। এর পর যারা ভর্তি পরীক্ষায় এদের থেকে খারাপ করবে, তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। টেকনিক্যালে পড়বে। সবাইকে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয় না। সারা পৃথিবীতেই এইচএসসি পাস করে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না। বিভিন্ন কারিগরি কোর্সসহ বিভিন্ন কাজ শিখে। একমাত্র আমাদের দেশেই ইন্টার পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। পলিটিকাল সাইন্স, ইসলামিক ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হবে। কিন্তু এগুলোতে পড়ে শিক্ষিত বেকার তৈরি হওয়া ছাড়া অন্য কিছু হবে না। বরং আজকাল বহু প্রফেশনাল ট্রেনিং বের হয়েছে। এসব জায়গায় প্রশিক্ষণ নিলেই দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের একটি উপায় হবে। পাশাপাশি কারিগরি খাতে বেশি সংখ্যক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আসে, তাহলে কারিগরি খাতটিও আরও সমৃদ্ধ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার এখন আর কোনো মানে নেই। যেটাতে কাজ পাওয়া যাবে, সেটাই করুক সবাই। সবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
প্রশ্ন: অনেকে ধরেই নেন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা মেধাবী এবং তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্য। এ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান: জিপিএ-৫ পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্য, এই প্রত্যাশা থাকা উচিত না। জিপিএ-৫ মানে প্রথম বিভাগে পাস করেছে। প্রথম বিভাগে পাস করা বহু শিক্ষার্থী পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি। কারণ তারা ভর্তি পরীক্ষায় টিকেনি। আমরা আগে ৬০% মার্কস পেলে প্রথম বিভাগ বলতাম, সেটাকে এখন ৮০% করে জিপিএ-৫ বলা হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়া এটিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আসলে জিপিএ-৫ কিছুই না।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কখন খোলা উচিত বলে মনে করেন?
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান: আমার ধারণা সরকার ২২ তারিখ থেকেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিবে। নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ারও কিছু নেই। এর আগেও প্রস্তুতি নিয়েই খুলেছিল। ফলে এবার আর নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছুই নেই। এখন স্বাভাবিকভাবে যেটা করতে হবে তা হলো কোনো শিক্ষার্থী যেন করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রমের বাইরে না থাকে, সবাইকে যেন টিকা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক হতে হবে। ইতোমধ্যে ইউরোপের দেশ সুইডেনে সকল বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ওদের দেশ করোনামুক্ত হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও আস্তে আস্তে করোনার প্রকোপ কমে যাচ্ছে। ওমিক্রনসহ বিভিন্ন ধরণের ভেরিয়্যান্ট, যে নামেই ডাকি না কেন, এগুলো থেকে যাবে। আমাদের এগুলোর সাথেই বসবাস করতে হবে। আমাদের আর কোনো অবস্থাতেই শিক্ষা বা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কার্যক্রমে যাওয়া উচিত হবে না। করোনার সাথে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে।
প্রশ্ন: শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনায় কয়েকটি দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান: শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি জানিয়েছে, বিষয়টি আমি গণমাধ্যমে দেখেছি। এখন চাইলেই তো আর সব পাওয়া যাবে না। চারবার বিজ্ঞাপন দিয়েও একজন প্রফেসর পাওয়া যায় না। আমাদের দেশ এখনও ওইরকম অবস্থা হয়নি যে দেশে ভুুরি ভুরি, ভালো ভালো পিএইচডি করা লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু তাদেরকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো ক্রমান্বয়ে করতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ের জন্য অবশ্যই পিএইচডি করা লোক লাগবে। জগন্নাথে থাকতে আমি নিয়ম করেছিলাম, পিএইচডি ছাড়া কেউ প্রফেসর হতে পারবে না। পাশাপাশি বাহিরের ডিগ্রী ছাড়া জগন্নাথে কেউ আর সহযোগী অধ্যাপকও হতে পারবে না। এগুলো আস্তে আস্তে হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে, বিষয়টি কিন্তু তা না। ওখানে অনেক ভালো ভালো জ্ঞানীগুণী শিক্ষকরা আছেন। আবার শিক্ষার্থীরাও যথেষ্ট ভালো করছে। এখন শুধু দরকার পড়ার পরিবেশ। আমি এর আগেও বলেছি, যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ভালো করছে, এগুলোর মধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি। হঠাৎ করে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি অস্থিরতা তৈরি হলো। কেন এটি হলো, এজন্য বোধহয় একটি তদন্ত করা দরকার। তদন্ত করলে জানা যাবে পুরো ঘটনার জন্য কে দায়ী। এখন তদন্ত করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন, পুরো ঘটনার জন্য উপাচার্য দায়ী, তাহলে ওনি নিশ্চয় ব্যবস্থা নিবেন। আর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যা-ই ঘটুক না কেন, কে দায়ী আর কে নির্দোষ পরে দেখা হবে, কিন্তু যা ঘটেছে তা দু:খ জনক। এ জন্য উপাচার্যকে ক্ষমা চাইতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো উপাচার্যও ক্ষমা চেয়েছেন।