শিরোনাম
জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতি বছর ২৬শে জুন সারা বিশ্বে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য : মাদক বিষয়ে হই সচেতন, বাঁচাই প্রজন্ম, বাঁচাই জীবন।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এই দিবসটি পালনের গুরুত্ব অনেক বেশি, কারণ করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯-এর এই মহামারির সঙ্গে ধূমপান ও মাদকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। ধূমপান বহু জটিল রোগ এবং কোভিড মৃত্যুর প্রবণতাকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। কমিট টু কুইট তামাকবিরোধী প্রচারে এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা।
বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশের ফলে আমাদের তরুণ যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ মানুষ বয়সে তরুণ। অর্থাত্ দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ। মাদকের ব্যবসায়ীরা এই কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদকের ভোক্তা হিসেবে পেতে চায়। সরকার ইতিমধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।
গবেষকরা আসক্তদের ৮০ শতাংশ কিশোর তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ ভাগই ধূমপায়ী এবং তার মধ্যে ৬০ শতাংশই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনসহ রাজধানীতে সংঘটিত অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই মাদকাসক্তির সম্পর্ক রয়েছে। একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে প্রায় ২০০ পিতা-মাতা নিজ সন্তানের হাতে খুন হয়েছেন।
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা থমকে গেছে। অথচ এই মহাদুর্যোগেও মাদক কারবারি চক্রের চোরাকারবার থেমে নেই। বিভিন্ন কৌশলে দেশে মাদকের চালান আনছে তারা। বিভিন্ন যানবাহন যেমন অ্যাম্বুলেন্স, নিত্যপণ্য পরিবহনের গাড়িতে করে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন নিয়ে আসছে কারবারিরা। দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের ইয়াবা কারবারিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান বন্ধ রাখেনি। কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো পার্সেলে এমনকি ত্রাণ বিতরণ এবং ওষুধ কেনাসহ বিভিন্ন অজুহাতে মাধ্যমে মাদক বিক্রি করছে তারা। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে পচনশীল পণ্য যেমন শাকসবজি ও ফলমূল বহনকারী যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, এ সুযোগটিকেই বেছে নিয়েছে মাদক কারবারিরা।
জাতিসংঘ বলছে, অনেক মাদকাসক্ত বিকল্প হিসেবে আরো মারাত্মক মাদকদ্রব্য গ্রহণ করছে। এরই মধ্যে অনেক দেশে হেরোইন স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। সেসব দেশে এখন এমন মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে, যেগুলো স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত এবং শরীরের ওপর হেরোইনের চেয়েও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। মাদকাসক্তরা অনেকেই ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন নেশাদ্রব্য প্রয়োগ করছে এবং একই সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করছে। ফলে এইচআইভি বা এইডস অথবা হ্যাপাটাইটিস ‘বি’ কিংবা ‘সি’ ইত্যাদি রক্তবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে হেরোইন ও কোকেনের সংকট তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘের ‘অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম’ (ইউএনওডিসি) বলছে, দেশে দেশে লকডাউন চলার কারণে মূলত মাদকদ্রব্যের এই সংকট ।