শরণার্থীদের জন্য আলেবেনীয় শহরে আফগান রুটির সুবাস

ফানাম নিউজ
  ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ২২:৫৮

আলেবেনিয়ায় সমুদ্রপাড়ের ছোট্ট একটি শহর শেংজিন। সেখানে পিজ্জারিয়া নামে ছোট একটি খাবারের দোকান আজকাল বেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এর সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেই নাকে আসবে সদ্যভাজা রুটির মৌ মৌ গন্ধ। তবে এটি যে সে রুটি নয়, আফগান নানরুটির একটি ধরন বলা যেতে পারে। শুধু আফগান নানই নয়, দোকানটিতে পাওয়া যাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী আরও অনেক পদের খাবার। শহরটিতে আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার শরণার্থীকে দেশি খাবারের স্বাদ পাইয়ে দিতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন দুই আফগান নারী।

গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার মানুষের মতো দেশ ছাড়েন হাসিবা আতাকপাল এবং নেজিনা খলিলও। আতাকপাল ছিলেন আফগানিস্তানের বৃহত্তম সংবাদ চ্যানেল টোলোনিউজের অন্যতম খ্যাতিমান সাংবাদিক আর খলিল আফগান প্রদেশ ঘোরের প্রথম নারী প্রসিকিউটর। পশ্চিমাসমর্থিত আফগান সরকারের আমলে সাহসী কাজের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন উভয় নারীই।

তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল কাতারের একটি শরণার্থী ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে। সেখান থেকে তাদের প্লেনে করে আলবেনিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। বলকান অঞ্চলের এ দেশটিতে হাজার তিনেক আফগান শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছেন। এর মধ্যে শেংজিনে থাকছেন প্রায় ১২শ’ আফগান।

আপনভূমি থেকে অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা এই শরণার্থীদের অনেকে বাড়ির খাবারের কথা মনে করে কষ্ট পান। তাদের এ দুঃখ দূর করতে হঠাৎ চমৎকার বুদ্ধি আসে আতাকপাল ও খলিলের মাথায়। আফগান খাবারের একটি রেস্তোরাঁ চালু করতে চান তারা। কিন্তু চাইলেই তো হবে না, তার জন্য জায়গা দরকার, তার আগে দরকার অর্থ- যার কোনোটাই তাদের হাতে নেই। তাহলে উপায়?

এ অবস্থায় এগিয়ে আগে পিজ্জারিয়া কর্তৃপক্ষ। আতাকপাল বলেন, আমরা তাদের কাছে আমাদের সমস্যাগুলোর কথা বললাম যে, আফগান সম্প্রদায় কীভাবে দেশি খাবার মিস করছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনার কথা খুলে বললাম, কীভাবে একটি আফগান রান্নাঘর চালু করা যায়। শুনে তারা সঙ্গে সঙ্গেই তাদের রেস্তোরাঁর জায়গা ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে দেয়।

এরপর থেকে পিজ্জারিয়ার ভেতরেই ‘ঘেজায়ে আফগানি’ নামে একটি রেস্তোরাঁ চালু করেন আতাকপাল ও খলিল। সেখানেই রান্না হচ্ছে আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো।

খলিল বলেন, এখানে লবিয়া (লাল শিমের তরকারি), কাবিলি পোলাও, বোলানিস (ভাজা রুটি), বানজান বোরানি (টমেটো সস দিয়ে বেগুন) পাওয়া যায়। আর আফগানিস্তানের মতো সব খাবারই নান দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

আতাকপাল বলেন, আফগান শরণার্থীরা দেশি খাবার কতটা মিস করছে তা দেখে আমরা তিন মাস আগে এই রেস্তোরাঁ শুরু করি। এখানে শরণার্থী শিবিরের সবাই মানসিক আঘাত সামলানোর চেষ্টা করছে আর আমরা তাদের মুখে হাসি ফোটাতে কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম।

খলিল বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন খাবার তৈরি করা যা দামি হবে না, মানুষ যেন সেগুলো কিনতে পারে। কারণ আমাদের প্রায় সব গ্রাহকই আমাদের মতো উদ্বাস্তু।

তবে শুধু শরণার্থীরাই নন, আফগান খাবারের জন্য দিন দিন স্থানীয়দের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘ঘেজায়ে আফগানি’। আতাকপাল বলেন, খুব আনন্দ হয় যখন আলবেনীয়রা এসে কাবিলি পোলাও-লবিয়া চায়। আমি মনে করি, এটি তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। আলবেনীয়রা আফগানদের প্রতি খুবই সদয়, তারা আমাদের দু’হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছে।

আফগান এ নারী আশা করেন, তাদের ছোট্ট ‘রেস্তোরাঁর ভেতর রেস্তোরাঁ’ আলবেনিয়ায় আফগানদের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রেখে যাবে।

আতাকপাল ও খলিল দুজনেই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। সেটি অনুমোদন হতে হয়তো বছরও লেগে যেতে পারে। ততদিন আলবেনিয়ায় এ রেস্তোরাঁ চালিয়ে যেতে চান তারা।