শিরোনাম
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ‘মহারাজা’কে ফিরে পেল টাটা শিল্পগোষ্ঠী। আনুষ্ঠানিকভাবে টাটার হাতে এল এয়ার ইন্ডিয়া। বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন। সেই সাক্ষাতের কয়েক ঘণ্টা পর আনুষ্ঠানিকভাবে টাটার হাতে তুলে দেওয়া হলো এয়ার ইন্ডিয়াকে।
আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের পর টাটা সন্সের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত খুশি। পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। টাটা গ্রুপে এয়ার ইন্ডিয়াকে ফিরে পেয়ে খুশি আমরা। বিশ্বমানের উড়োজাহাজ সংস্থায় পরিণত করার করার জন্য আমরা সবার সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি।’
১৯৩২ সালে অবিভক্ত ভারতে ‘টাটা এয়ারলাইনস’ চালু করেছিলেন শিল্পপতি জে আর ডি টাটা। সেই বছরের ১৭ অক্টোবর করাচি থেকে চিঠিপত্র নিয়ে বোম্বে হয়ে মাদ্রাজ উড়ে গিয়েছিলেন জে আর ডি টাটা স্বয়ং। সেই ঘটনার ছয় বছরের মধ্যে আকাশে ওড়ে টাটা এয়ারলাইনসের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান। তার কয়েক বছরের মধ্যেই নামবদল। টাটা এয়ারলাইনস হয়ে যায় ‘এয়ার ইন্ডিয়া’। মালিকানা পুরোটাই থাকে টাটাদের হাতে। এরপর নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে সরকার নিয়ে নেয় টাটা গোষ্ঠী। এয়ার ইন্ডিয়া আবার ৬৮ বছর পর ফিরে এল টাটার হাতে।
গত বছরের শেষের দিকে ১৮ হাজার কোটি রুপির বিনিময়ে টাটা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিবহন সংস্থা ‘এয়ার ইন্ডিয়া’ ও ‘এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস’-এর শতভাগ এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংস্থা ‘এয়ার ইন্ডিয়া স্যাটস’-এর ৫০ শতাংশ মালিকানা। ১৯৫৩ সাল থেকে জে আর ডি টাটা এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁকে ১৯৭৮ সালে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এয়ার ইন্ডিয়া স্বাধীন ভারতের চেয়েও পুরোনো সংস্থা। জে আর ডি টাটা পাইলটের লাইসেন্স পাওয়া প্রথম ভারতীয়। তিনি ১৯৩২ সালে করাচি এবং বোম্বাইয়ের (বর্তমানে মুম্বাই) মধ্যে এয়ার মেইল পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি শিগগিরই পরিষেবার ব্যাপ্তি ঘটান ও ১৯৪৬ সালে নাম বদলে করেন ‘এয়ার ইন্ডিয়া’। ১৯৫৩ সালে টাটার হাত থেকে বিমান সংস্থা অধিগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন জে আর ডি টাটা। ১৯৭৮ সালে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন জনতা পার্টি সরকার টাটাকে সরিয়ে দেয় চেয়ারম্যানের পদ থেকে। পরে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আবারও জে আর ডি টাটাকে এয়ার ইন্ডিয়ার বোর্ডে বসান।
এয়ার ইন্ডিয়া বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বাড়াতেও দেশটির সংস্কৃতির দূত হিসেবে কাজ করেছিল। বিমান সংস্থাটি দেশের প্রধান প্রধান শহরে অফিস খুলে বিদেশিদের আকৃষ্ট করে ভারতের শিল্প ও নান্দনিকতার ওপর ভিত্তি করে ব্র্যান্ড তৈরি করে। ভারতীয় শিল্পের অন্যতম বড় সংগ্রাহক হয়ে উঠেছে এয়ার ইন্ডিয়া। এয়ার ইন্ডিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমএফ হুসেইন, ভিএস গাইতোন্ডে, অঞ্জলি এলা মেননের মতো বিখ্যাত শিল্পীর নাম। অনন্য ব্র্যান্ড তৈরির চেষ্টায় এয়ার ইন্ডিয়া সালভাদর দালিকে একটি ছাইদানি (অ্যাশট্রে) নকশা করাতে রাজি করান। প্রায় ২৫০টি প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল সেই নকশা করা অ্যাশট্রে। এতকিছুর পর এয়ার ইন্ডিয়ার ‘মহারাজা’ ম্যাসকটের চেয়ে কোনো কিছুই বেশি করে তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানেনি।
এয়ার ইন্ডিয়ার বাণিজ্যিক পরিচালক ববি কুকার কল্পনা ও শিল্পী উমেশ রাওয়ের সহযোগিতায় ‘মহারাজা’ ম্যাসকট ১৯৪৬ সালে প্রথম আবির্ভূত হয়। ভারতীয় আতিথেয়তার প্রতীক হয়ে ওঠে ম্যাসকটটি। ২০২১ সালে ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে মহারাজার।