শিরোনাম
স্থানীয়ভাবে গ্রামটির নাম ‘ছোট রাজ্য’। স্যাঙ্কটো লুসিও ডি কম্বোস্কোরো ইতালির একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম। বিস্ময়ের বিষয় হলো-ইতালি এবং ফ্রান্সের পিডমন্ট অঞ্চলের মধ্যবর্তী সীমান্তে অবস্থিত এ গ্রামের লোকজন ইতালীয় ভাষায় কথা বলেন না। গ্রামটির দাপ্তরিক ভাষা হলো প্রোভেনসাল। ফ্রান্সের অক্সিটানিয়া অঞ্চলজুড়ে প্রাচীন মধ্যযুগীয় নব্য-ল্যাটিন উপভাষা এটি। সূত্র: সিএনএন।
গ্রামটির অধিবাসী সংখ্যা মাত্র ৩০ জন কিংবা কিছু বেশি। গ্রামে অল্প কজন লোক থাকলেও স্থানীয়দের জীবনযাত্রা খুব একটা সহজ নয়। মেষপালক পরিবার নিয়ে গঠিত গ্রামের মানুষগুলো নেকড়েপালের আক্রমণের আশঙ্কায় তটস্থ থাকেন ২৪ ঘণ্টাই। নেকড়েগুলো আসে মূলত তাদের মেষগুলোকে খেতে। এখানে শীতকালে প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকে না সপ্তাহের পর সপ্তাহ। ইন্টারনেট সুবিধা নেই বললেই চলে।
বার, সুপারমার্কেট এবং রেস্তোরাঁর কথা তো ভাবাই যায় না। তাদের সামাজিক বিনোদন বলতে শুধু গ্রামে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার গুঞ্জনচর্চাই, নয়তো দলবেঁধে দিনের আলোতে সন্তর্পণে মাশরুম শিকারে বেরিয়ে পড়া। ভেড়ার লোম সরবারাহ এ গ্রামের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। শহর থেকে ব্যবসায়ীরা এ গ্রামে আসেন উল কিনতে। অনেকে ঔষধি উদ্দেশ্যে গাঁজা এবং অন্যান্য ভেষজ চাষ করেন। স্থানীয় রাখাল অ্যাগনেস গ্যারোন (২৫) বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো টিভি নেই। যখন একটানা ১৫ দিন ধরে বিদ্যুৎ থাকে না, তখন আমরা আমাদের দাদা-দাদিদের (তেলের কুপি) শরণাপন্ন হই। আমি ভেড়া চরাতে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে অভ্যস্ত। বছরে ৩৬৫ দিনই আমার কাজ, ছুটির দিন বলে কিছু নেই। ক্রিসমাস কিংবা নববর্ষ কী তা বুঝি না। কারণ, যেকোনো উৎসবের দিনও আমার পশুপালকে খাওয়াতে হয়। ভেড়া যখন নতুন বাচ্চার জন্ম দেয়, তখন ওটাই আমার জন্য উৎসবানন্দে পরিণত হয়।’
পিডমন্ট অঞ্চলের যেখানে গ্রামটি রয়েছে, ওই অঞ্চলটি বেশ কয়েকবার ইতালীয় এবং ফরাসি শাসনের ভাগ পেয়েছে। এ কারণে বাসিন্দারা গ্রামটি ইতালির নাকি ফ্রান্সের, তা নিয়ে মাথা ঘামান না। শুধু ভাষাটা রয়ে গেছে প্রোভেনসাল। গ্রামটির জনসংখ্যা দিন দিনই কমে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় পাত্তাড়ি গুটিয়েছেন এ গ্রাম থেকে। ১৯৫০-এর দশকে যখন গ্যারোনের দাদা সার্জিও আর্নিওডো গ্রামটির স্কুলশিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখনই যেন জীবন ফিরে পেয়েছিলেন গ্রামবাসী। এখানে তিনিই প্রোভেনসাল ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। গ্রামটি দেখতে হলে প্রথমে যেতে হবে ইতালির তুরিনে। এরপর ট্রেনে এবং বাসে করে রাজ্যের দক্ষিণে গেলেই পাওয়া যাবে আলপাইনের চূড়া। এ সময়েই দেখা যাবে চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক গ্রাম কম্বোস্কোরো।