শিরোনাম
ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনার দায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দায় চাপিয়েছে রাশিয়া। এ জন্য নিজেদের সেনাদের সতর্ক করেছে মস্কো। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য উল্টো রাশিয়াকে দায়ী করে বলেছে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের বাহিনী প্রস্তুত। এ জন্য ইউরোপে সামরিক উপস্থিতিও বাড়িয়েছে জোটটি। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে, সে জন্য প্রায় সাড়ে আট হাজার সেনাকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিউইয়র্ক টাইমস–এর খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে তিন পাশ থেকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা রাশিয়ার সেনাদের। বার্তা সংস্থা আরআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়াচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে এই মহড়া শুরু করেছে তারা। রুশ সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন ৬ হাজার সেনা। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়ায়। এই এলাকাতেও মহড়া চালাচ্ছে রুশ বাহিনী।
এই মহড়ার অংশ হিসেবে সেখানে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধবিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা, যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এ ছাড়া কাস্পিয়ান সাগরে নৌবহরও মোতায়েন করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের কারণে উত্তেজনা ইতিমধ্যে বেড়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যুক্তরাষ্ট্রের এই সময়ের পদক্ষেপ এখন উদ্বেগের কারণ।’
তবে এর বিপরীতে ন্যাটোর প্রস্তুতিও জোরালো। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারগারিটা রোবেলস গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, তাঁদের যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান পূর্ব ইউরোপে মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কোনো আক্রমণ চালানোর জন্য এসব মোতায়েন করা হয়নি। স্থিতিশীলতা এবং প্রতিরোধের জন্য এসব মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরেও দুটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে দেশটি।
এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, পশ্চিম ইউরোপ থেকে ধীরে ধীরে সেনা পূর্ব ইউরোপে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে রাশিয়া। তাই মোতায়েনের জন্য প্রায় সাড়ে আট হাজার মার্কিন সেনাকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ন্যাটোর পক্ষ থেকেও সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা তাদের বাহিনীকে সতর্ক রাখছে। এ ছাড়া পূর্ব ইউরোপে আরও যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করছে তারা।
এ ছাড়া এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও পোল্যান্ডে সেনা মোতায়েন করেছে ন্যাটো। এই সেনা ছাড়াও ট্যাংক, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, গোয়েন্দা ও নজরদারি যন্ত্র মোতায়েন করেছে ন্যাটো। ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস ন্যাটোর হয়ে সেনা, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এসব সেনা ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও রোমানিয়ায় মোতায়েন করা হতে পারে।
বাইডেনের কূটনৈতিক তৎপরতা
সামরিক তৎপরতার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে গত সোমবার ৮০ মিনিটের একটি ভিডিও কলে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারা এই ভিডিও কলে অংশ নেন।
শান্ত কিয়েভ
ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দেশটির সীমান্তে সামরিক উপস্থিতিও বাড়ছে। কিন্তু এর আঁচ লাগেনি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে। সোমবার সেখানকার পরিস্থিতি ছিল শান্ত। অনেকে দোকানে যাচ্ছেন, ক্যাফেতে ভিড় করছেন। এ ছাড়া রাজধানীর কিছু এলাকায় উৎসবের আয়োজনও চোখে পড়েছে।
তবে স্বাভাবিক জীবনযাপনের পাশাপাশি অনেকে উদ্বিগ্ন ভেতরে-ভেতরে। যদি রাশিয়া হামলা চালায় তাহলে কী করবেন, এমন পরিকল্পনা করছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে ইউক্রেনের ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভের কমিউনিকেশন ম্যানেজার মারিয়া গ্লাজুনোভা বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।