শিরোনাম
বেশ কয়েক মাস দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের প্রকাশ্যে মতবিরোধ চলার পরে, গতকাল সোমবার রাতে দুই বিদ্রোহী নেতাকে বহিষ্কার করল পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা দলবিরোধী কাজ করছিলেন। যদিও সেই দলবিরোধী কাজের ব্যাখ্যা বিজেপি দেয়নি। তবে নির্বাচনে হারার পরে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের মধ্যে যে গোষ্ঠী লড়াই শুরু হয়েছিল, এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলো বলে রাজ্য নেতারা মনে করছেন।
যে দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন জয়প্রকাশ মজুমদার ও রিতেশ তেওয়ারি। এরা দীর্ঘ সময় বিজেপিতে রয়েছেন, জয়প্রকাশ অতীতে কংগ্রেসের রাজনীতি করতেন। কিছুদিন আগে বিজেপি যে নতুন রাজ্য কমিটি গঠন করে, সেখান থেকেও দুই নেতাকে বাদ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পরে দেখা যায়, এরা বিজেপির মধ্যে পৃথক গোষ্ঠী তৈরির চেষ্টা করছেন।
বিজেপির এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে নানা ধরনের সমস্যা চলছে। কিন্তু সম্প্রতি সমস্যা বেড়েছে নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে। এত দিন ব্যক্তি নেতারা দলের একটা অংশের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে নমশূদ্র ও মতুয়া সম্প্রদায়, যারা বিজেপির একটা বড় ভোটব্যাংক, তারাও বিজেপির বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। কারণ, নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়িত করা যায়নি। সেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে ছিলেন জয়প্রকাশ ও রিতেশ তেওয়ারির মতো নেতারা। এ ছাড়া আরও অনেকে এ ধরনের কাজ করছেন। এঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী তপসিলি জাতিভুক্ত নমশূদ্র সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মীয় গোষ্ঠী মতুয়াদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, পরিবর্তিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়িত করে তাদের পাকাপাকিভাবে ভারতের নাগরিক করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। জানুয়ারি মাসেও ফের আইনের বাস্তবায়ন পিছিয়ে গিয়েছে। এ ঘটনার জেরে মতুয়া সম্প্রদায়ের অন্তত পাঁচজন এমএলএ দলের ভেতরে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন এবং বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, মোট ১২ জন এমএলএ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের ওপরে অসন্তুষ্ট। বিজেপি ভয় পাচ্ছে, এরাও হয়তো দল ছেড়ে দেবেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা সত্তরে নেমে গিয়েছে। এরপরে যদি আরও এমএলএ দল ছাড়েন, তবে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে ধস নামবে। সেটা আটকানোর চেষ্টাতেই এই বহিষ্কার।
মতুয়া সম্প্রদায়ের সদর দপ্তর ঠাকুরনগর থেকে দলের এক প্রভাবশালী কর্মী সুজন ব্যাপারী বলেন, মতুয়ারা এখনো পুরোপুরি বিজেপির বিরুদ্ধে চলে না গেলেও ভবিষ্যতে যেতে পারে। সুজন বলেন, ‘শুধু যে নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়িত হয়নি তাই নয়, রাজ্য কমিটিতে কোনো মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে রাজ্য কমিটিতেও রাখা হয়নি। এটা কীভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব।’ তিনি নিজেও একজন মতুয়া।
এ ঘটনার জেরে বিজেপির মতুয়া পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) শান্তনু ঠাকুর এবং তাঁর ভাই বিধানসভার এমএলএ সুব্রত ঠাকুরের নেতৃত্বে গত কিছুদিন ধরেই মতুয়া নেতাদের একাংশ রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছিলেন। মতুয়া সম্প্রদায়ের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও জয়প্রকাশ ও রিতেশ এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছিলেন। তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগও করেছিলেন। বিজেপির সূত্রটি জানায়, তাদের বহিষ্কার করে বাকিদের বার্তা দেওয়া হলো, দলের মধ্যে কোনো ধরনের বিদ্রোহ বিজেপির রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সহ্য করবে না।
মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে এ অভিযোগের উত্তর দিয়ে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভেতরেই দলকে দুর্বল করার চেষ্টা চলেছে। রাজ্য বিজেপির ভেতরে এমন একটা অংশ রয়েছে, যারা দলকে দুর্বল করতে চায়। অন্য রাজ্য থেকে নেতা এনে বাংলার দখলের চেষ্টা হয়েছিল এবং সেটা ভুল হয়েছিল। এ কথা আমি দলকে বলেছিলাম। এখনো বলব।’