উইঘুরে কী ঘটছে তার কিছুই জানেনা চীনের জনগণ

ফানাম নিউজ
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৫৯

‘নিখোঁজ’ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক শিক্ষাবিদ, আইনজীবী এবং শিল্পী। আছে বড় বড় গোপন বন্দীশালা। জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মসজিদ। জাতিগত সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের চীনা জাতীয়তাবাদ গ্রহণে বাধ্য করার প্রমাণও রয়েছে অসংখ্য। কিন্তু চীন তার নাগরিকদের কাছ থেকে এসবই গোপন রাখতে পেরেছে সফলভাবে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) কড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে দেশটির মিডিয়াও কিছু প্রকাশ করতে পারছে না। দেশটির ইন্টারনেট পরিষেবাও বাকি বিশ্বের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।

ফলে চীনা নাগরিকরা উইঘুর মুসলিমদের ওপর পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনটি সম্পর্কেও কিছুই জানেন না। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক ওই প্রতিবেদনে উইঘুরদের ওপর ভয়াবহ মানবাধিকার লঙঘনের চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উপসংহার টানা হয়েছে, জিনজিয়াং নিয়ে বেইজিংয়ের নীতি মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার শামিল হতে পারে।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে উইঘুরদের ওপর নানা নির্যাতন, ধর্ষণ, বৈষম্য, জোরপূর্বক কাজ করানো ও জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে করে তাদের জন্মহার নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। এ ছাড়া উইঘুরদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের ওপরও সহিংস দমনপীড়ন চালানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

কিন্তু জিনজিয়াং প্রদেশে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ সম্পর্কিত ৪৬ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম WeChat এবং Weibo-তে প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না। মূল প্রতিবেদনের সমস্ত লিঙ্ক মুছে ফেলা হচ্ছে।

রিপোর্টটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে যখন চীনের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান শি জিন পিংকে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। আগামী ১৬ অক্টোবর তাকে চীনের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নেতাদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেবে চীনের জাতীয় সংসদ। এর ফলে শি জিন পিং চাইলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন।

জাতিসংঘের ওই রিপোর্টের পর চীনও ১২২ পৃষ্ঠার একটি পাল্টা রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে উইঘুরদের বিরুদ্ধে চরমপন্থার অভিযোগ আনা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে চীনের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান চালানোর যৌক্তিকতা দেখানো হয়। যদিও চীনের এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

চীনের বিস্তীর্ণ জিনজিয়াং প্রদেশ আয়তনে জার্মানির প্রায় পাঁচ গুণ। এখানেই উইঘুর জনগোষ্ঠীর বসবাস। ফর্সা ত্বক, সবুজ চোখ, লাল চুল- উইঘুর জনগোষ্ঠীর সাধারণ শারীরিক বৈশিষ্ট্য। মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা উইঘুরদের সংস্কৃতিতে ইসলামি রীতিনীতি-আচার প্রবল। উইঘুরদের একটি বিশাল অংশ চীন থেকে স্বাধীন হয়ে পূর্ব তুর্কিস্তান নামের একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। কিন্তু চীন তাতে নারাজ।

ফলে চীন উইঘুরদের ক্রমে আরও বেশি শুধু সন্দেহের চোখেই দেখছে না; বরং বিপজ্জনক রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবেও বিবেচনা করছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ইসলামি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগও আনছে চীন। স্বাধীনতা চাওয়ায় তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের শুরুর দিকে চীন সেখানে বিশাল আকারের সব বন্দিশিবির নির্মাণ এবং উইঘুর মুসলিমদের পরিচয়, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের যেকোনো অভিব্যক্তি নিশানা করে গণহারে তাদের আটক করা শুরু করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে উইঘুরদের ওপর চীনের এই নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে এই বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করার আহবান জানিয়েছে। এই আহবানকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বাধীনতাকামী পূর্ব তুর্কিস্তানের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী সালেহ হুদায়ের।