শিরোনাম
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে পাকিস্তান। বন্যার আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকটে ছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি। বন্যার কারণে তা চরম আকার ধারন করেছে। বন্যার কারণে ইতিমধ্যেই ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। জাতিসংঘও দেশটির জন্য জরুরি সহায়তার আহবান জানিয়েছে।
এমন অবস্থায় পাকিস্তানের অর্থনীতির একটি হতাশাজনক চিত্র উপস্থাপন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো পাকিস্তানকে এমন একটি দেশ হিসাবে দেখতে শুরু করেছে যেটি সর্বদা অর্থ চাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বুধবার আইনজীবীদের এক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ যখন আমরা কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ দেশে যাই বা ফোন করি, তখন তারা মনে করে যে আমরা (তাদের কাছে) টাকা ভিক্ষা করতে এসেছি’।
প্রধানমন্ত্রী শরিফ আরও বলেন, বন্যার আগে পাকিস্তানের অর্থনীতি একটি ‘চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হয়েছিল। আর এই বন্যা সেটিকে আরও ‘জটিল’ করে তোলে।
তিনি বলেন, গত এপ্রিলে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করার সময় পাকিস্তান ‘অর্থনৈতিক খেলাপি’র দ্বারপ্রান্তে ছিল এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশকে খেলাপি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে তার জোট সরকার। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তার সরকার অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণও করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি এখন ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ রয়েছে স্বীকার করে শাহবাজ শরিফ পরোক্ষভাবে এই ঘটনার জন্য পূর্ববর্তী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারকে দায়ী করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী শাসকরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং বর্তমান সরকারকে কঠোর শর্তে সম্মত হতে বাধ্য করেছে। এমনকি শর্ত পূরণ না হলে আইএমএফ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের হুমকিও দিয়েছে বলে জানান পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী।
শাহবাজ শরিফ বলেন, এমনকি ছোট অর্থনীতির দেশও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং ‘আমরা গত ৭৫ বছর ধরে ভিক্ষার বাটি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি’। এই অঞ্চলে এমন দেশও রয়েছে যাদের জিডিপি পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম থাকলেও বর্তমানে তারা রপ্তানির দিক থেকে (পাকিস্তানের চেয়ে) অনেক এগিয়ে গেছে বলেও আইনজীবীদের জানান তিনি।
শাহবাজ প্রশ্ন করেন, ৭৫ বছর পর পাকিস্তান আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? এটি খুব পীড়াদায়ক প্রশ্ন … আমরা সর্বদা একটি বৃত্তের মধ্যে ঘুরছি। তিনি বলেন, দেশে সম্ভাবনা আছে কিন্তু কাজ ‘করতে ইচ্ছার অভাব রয়েছে’।
পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী আগামী শীতে সম্ভাব্য গ্যাস সংকটের বিষয়েও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, শীত মৌসুম আসার আগেই তিনি গ্যাসের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি ও বন্যা দেশে নজিরবিহীন বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এমন জলবায়ু-জনিত বিপর্যয় সম্ভবত বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায়নি।