শিরোনাম
ফেসবুক গ্রুপ কিংবা পেজে ব্যবহারকারীরা ‘ভীতিকর ও মুসলিমবিদ্বেষী’ কনটেন্ট ছড়াচ্ছে জেনেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। হিন্দি ও বাংলা শব্দগুলো ঠিকঠাক বুঝতে পারার মতো অ্যালগরিদম না থাকায় ফেসবুক তেমন কনটেন্ট শনাক্ত করতে পারে না বলে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের অভিযোগ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন। তিনি বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ গবেষণা ও নথি গণমাধ্যমে ফাঁস করে আলোচনায় এসেছেন সম্প্রতি। সুত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) ফেসবুকের অসদাচরণ নিয়ে জানানো অভিযোগে অনেক বিষয়ের মধ্যে হাউগেন বলেন, ফেসবুকের ভাষা বুঝতে পারার দক্ষতা সীমিত এবং বিশ্বে ভুয়া তথ্য ও জাতিগত সহিংসতা ছড়ানোর সেটি অন্যতম কারণ।
‘অ্যাডভারসারিয়াল হার্মফুল নেটওয়ার্কস—ইন্ডিয়া কেস স্টাডি’ শীর্ষক গোপন নথির উল্লেখ করে মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে হাউগেনের পক্ষে অভিযোগ করে অলাভজনক সংস্থা হুইসেলব্লোয়ার এইড। সেখানে বলা হয়, ‘মুসলিমদের নিয়ে বেশ কিছু অমানবিক পোস্ট ছিল...আমাদের হিন্দি ও বাংলা শব্দ বাছাই করার প্রযুক্তির অভাব থাকায় এই পোস্টগুলোর বেশির ভাগই কখনো চিহ্নিত করা কিংবা এগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ হাউগেনের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা আটটি নথি আপলোড করেছে মার্কিন টিভি চ্যানেল সিবিএস নিউজ। এই টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেই সোমবার প্রথম সামনে আসেন তিনি।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রশ্নের জবাবে ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও সহিংসতা ছড়ায়, এমন কনটেন্ট আমরা নিষিদ্ধ করেছি। ঘৃণাত্মক কনটেন্ট রিপোর্ট করার আগেই তা শনাক্ত করার প্রযুক্তিতে বছরের পর বছর ধরে আমরা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে আসছি। বিশ্বব্যাপী ৪০টির বেশি ভাষার সঙ্গে হিন্দি ও বাংলায় কনটেন্ট শনাক্তে আমরা এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।’
ফেসবুকের দাবি অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ভারতীয় ব্যবহারকারীদের প্রায় ৮ লাখ ৭৭ হাজার বিদ্বেষমূলক পোস্ট সরানো হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা কর্মীর পরিমাণ তিন গুণ বাড়িয়ে ৪০ হাজার করা হয়েছে। তাঁদের ১৫ হাজারের বেশি কর্মী কনটেন্ট পর্যালোচনার কাজে নিযুক্ত।
ফেসবুকে কী ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করা হচ্ছে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি তো জেনেছেই, পাশাপাশি রাজনীতিবিদদের শেয়ার করা ভুয়া তথ্যের প্রভাব কেমন, তা আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয়। এক ব্যবহারকারীর একাধিক অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে ফেসবুক তেমন দক্ষ নয় বলেও অভিযোগ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির এক অভ্যন্তরীণ প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করা হয়, ভারতের রাজনৈতিক দল বিজেপির এক কর্মকর্তা হিন্দিতে বার্তা পাঠানোর ব্যাপারটি জনপ্রিয় করার জন্য একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন।
বিশ্বের এত মানুষের ওপর ফেসবুকের ‘ভীতিকর প্রভাব’ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির সামনে মঙ্গলবার সে বিষয়ে শুনানিতে সাক্ষ্যদানে অংশ নেন হাউগেন। সে শুনানির পর এক ফেসবুক পোস্টে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ‘লাভের আশায় আমরা মানুষের মধ্যে বারবার ক্রোধ ছড়াচ্ছি, এমন যুক্তি দেখানো একদমই অযৌক্তিক। আমরা আয় করি বিজ্ঞাপন থেকে, আর বিজ্ঞাপনদাতারা আমাদের প্রতিনিয়ত বলতে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিকর কনটেন্টের পাশে তাঁদের বিজ্ঞাপন দেখতে চান না। এবং কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মানুষকে ক্রুদ্ধ বা বিষণ্ণ করতে পণ্য বানায় বলে আমার জানা নেই।’
ব্যবহারকারীর সংখ্যার বিচারে ফেসবুকের বড় বাজারগুলোর একটি ভারত। দেশটিতে ফেসবুকের ৪১ কোটি, হোয়াটসঅ্যাপের ৫৩ কোটি এবং ইনস্টাগ্রামের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১ কোটি।