শিরোনাম
হেমায়েত আলী বাসার কাছে একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গেছেন। সেখানে গিয়ে ঠাণ্ডা-জ্বরের জন্য ওষুধ চাইলেন। দোকানি তার কাছে জানতে চাইলেন ঠাণ্ডা জ্বর ছাড়া আর কোনও সমস্যা আছে কিনা। তিনি জবাব না দিয়েই ঠাণ্ডা-জ্বরের ওষুধ চাইলেন। দোকানি তাকে প্যারাসিটামলসহ কিছু ওষুধ দিয়ে দিলেন। করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে হেমায়েত বলেন— ‘না, সামান্য ঠাণ্ডা-জ্বরে পরীক্ষার কী দরকার!’
দেশে গত জানুয়ারি মাসে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন মোট ২ লাখ ১৩ হাজার ২৯৪ জন এবং মারা গেছেন ৩২২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ঢাকায় কোভিড ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ১৪৫ বেডের মধ্যে ২ হাজার ৮৬৫টি বেড খালি ছিল। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখের হিসাবে দেখা যায়, ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৫৪৬ বেডের মধ্যে ২ হাজার ৫৮১ বেডই খালি। অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৬৩৯ বেডের মধ্যে ১ হাজার ২৮৪ বেডই খালি রয়েছে। একই অবস্থা আইসিইউ বেডগুলোরও। তবে বেশকিছু সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে নন কোভিড রোগীতেই বেড ভর্তি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য বলছে, ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর ৭৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেডই খালি রয়েছে। আর আইসিইউ বেড ফাঁকা আছে ৬৫ শতাংশ। বেসরকারি হাসপাতালের ৭৮ শতাংশ বেড এবং ৭৫ শতাংশ আইসিইউ বেড ফাঁকা আছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকায়। আবার ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের খালি বেডের পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা যায় যে, করোনা শনাক্তদের বেশিরভাগই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা অনেক কম। যারা আসছেন তাদের তীব্রতা কম। যাদের আইসিইউ লাগছে তাদের কোমরবিডিটি আছে।
রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে মোটামুটি স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। আক্রান্তর সংখ্যা তো এখন আগের চেয়ে কমছে। আগে যেমন একদম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল, সেরকম অবস্থা এখন নেই। যারা হাসপাতালে আসছে তাদের অনেকেই বয়স্ক লোক, কোমরবিডিটি আছে এবং টিকা নেয়নি এমন। আর বেশিরভাগই মৃদু উপসর্গ নিয়ে আসছে। আমরা বেশিরভাগই বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। করোনার যে ঢেউ, সেই তুলনায় আমাদের রোগী বাড়েনি।’
শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে একদম রোগী কম ছিল, নাই বললেই চলে। জানুয়ারি মাসেও অল্প সংখ্যক রোগী ছিল। এখন সব মিলিয়ে আমাদের এখানে ১২ জন রোগী ভর্তি ছিল। দুই জন করে হয়তো ভর্তি হচ্ছে, তবে সেভাবে চাপ নেই। ডেল্টার সময় অনেক রোগী ভর্তি ছিল। প্রতিদিন আমাদের এখানে ৪-৫ জন মৃত্যুবরণ করতেন। সেই তুলনায় এখন অনেক কম।’
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ‘ভেঙে পড়তে পারে’ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে এমন আশঙ্কা থাকবে না বলে মনে করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালগুলো সেবার ওপরে এখনও মাত্রাতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়নি। টিকাদান কর্মসূচি যেভাবে চলছে, আমরা নিশ্চিত, হাসপাতালগুলোর ওপর যে বাড়তি চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেটি হবে না।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন