শিরোনাম
প্রতি বছরই মরণকামড় বসাচ্ছে ডেঙ্গু। বছরজুড়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সাত বছরমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য এই কৌশলপত্রে সব সংস্থার সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আমি মাকে হারিয়েছি। তাই এটা নিয়ে আমার চিন্তা আছে। আমি কাজ করব যাতে আর কারও স্বজন এতে মারা না যায়। সব রোগের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে যাতে রোগটি কারও হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি ছিল। মানুষের ডেঙ্গু না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মশা নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন এবং যে ঘরে মানুষ থাকে সেখানকার সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল (২০২৪-২০৩০) হাতে নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ও এ রোগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা সাত বছরমেয়াদি এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ কমিয়ে আনা হবে। প্রতি ১ হাজার মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ একজন আক্রান্ত হবে। আর এ রোগে মৃত্যুর হারও কমিয়ে আনা হবে ০.১ শতাংশে। অর্থাৎ প্রতি ১ হাজার রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ একজনের মৃত্যু।
গত বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপের পর এ উদ্যোগ নিল সরকার। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর ৩ লাখ ২১ হাজার জনেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মারা যান ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ। সে হিসাবে মৃত্যুর হার ০.৫৩ শতাংশ। এ বছরও ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ৩৯৭ জনেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যেই মারা গেছেন ২৯ জন। কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, অধিক জলাবদ্ধতা, বন্যা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও দেশের ঋতুতে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়াসহ ডেঙ্গুর অন্যান্য ভেক্টরবাহিত রোগের সংক্রমণের জন্য বাংলাদেশের জলবায়ু পরিস্থিতি আরও অনুকূল হয়ে উঠছে। ডেঙ্গুর সংক্রমণ বর্ষাকালে শীর্ষে থাকে। মশার ঘনত্ব এবং বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার।
এতে আরও বলা হয়েছে, ডেঙ্গুর জন্য কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে সময়মতো রোগ শনাক্ত করা, গুরুতর ডেঙ্গু সংক্রমণের সতর্কতা চিহ্ন চিহ্নিত করা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা হলো মৃত্যুহার ১ শতাংশের কম করার মূল উপাদান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এডিস মশার প্রজনন বাড়াচ্ছে। যা এই রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বড় চ্যালেঞ্জ। এই মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের অভাব রয়েছে। ক্রমবর্ধমান অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ডেঙ্গু ভাইরাসের একাধিক সেরোটাইপ এবং রোগীর উপসর্গের পরিবর্তন, জনসচেতনতার অভাব এবং শহর থেকে গ্রামে রোগের ব্যাপক বিস্তার হওয়া অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর দক্ষতা বাড়ানো হবে, যাতে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। একই সঙ্গে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, যাতে কীটনাশক ও অন্যান্য পদ্ধতি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গৃহস্থালি পর্যায়ে কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে মাল্টিসেক্টরাল কো-অর্ডিশেন ব্যবস্থা করা হবে। ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়াও এই কৌশলের অংশ। সর্বশেষ বৈশ্বিক অংশীদারির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ডেঙ্গু প্রতিরোধক টিকা দেওয়ারও পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া কারখানা, অফিস, বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন সংস্থাগুলো বছরব্যাপী ভেক্টর কন্ট্রোল কার্যক্রম পরিচালনা করবে।