শিরোনাম
করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধ প্যাক্সোভির রোগীর হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর ঝুঁকি ৮৯ শতাংশ কমায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গের করোনা রোগীদের শুরুর দিকেই এ ওষুধ দেওয়া গেলে ভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা কমে যায়।
তবে প্যাক্সোভিরের মাত্রা নির্ধারণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজন। করোনা রোগীর চিকিৎসায় ‘গেম চেঞ্জার (মোড় পাল্টানো পদক্ষেপ)’ হতে পারে ওষুধটি।
করোনার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নিয়ে আয়োজিত সিএমইতে (ধারাবাহিক চিকিৎসা শিক্ষা) অংশ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা এসব কথা বলেন।
আজ শনিবার ‘অ্যান্টিভাইরালস ফর কোভিড-১৯’ শীর্ষক এই হাইব্রিড সিএমইর আয়োজন করে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি এসকেএফ। এতে বিশ্বের ৩০টি দেশের চিকিৎসকেরা যুক্ত হন। দেশের ৩৪টি মেডিকেল কলেজসহ মোট ৪২টি স্বাস্থ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার চিকিৎসক এই সিএমইতে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত বছরের শেষ সপ্তাহে করোনায় দেশটির ফাইজার কোম্পানির নির্মাট্রেলভির ও রিটোনাভির ট্যাবলেটের সংমিশ্রণে ওষুধের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশ সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই কম্বিনেশন ওষুধ ৩০ ডিসেম্বর জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। এসকেএফ ‘প্যাক্সোভির’ নামে ওষুধটি বাজারে এনেছে। প্রাপ্তবয়স্ক ও ১২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গের করোনার চিকিৎসায় এ ট্যাবলেটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সিএমইতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ শুরুর তিন দিনের মধ্যেই রোগীকে প্যাক্সোভির দিতে পারলে ভালো। প্যাক্সোভির সংক্রমণের তীব্রতা কমিয়ে দেয়। করোনার নতুন ধরনের সময়ে প্যাক্সোভির জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে এসেছে।
প্যাক্সোভির সেবনে মৃদু ও মাঝারি সংক্রমণের রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা কমে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ। তিনি বলেন, করোনার মতো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিততে প্রাথমিক পর্যায়েই দ্রুত ও কার্যকর ওষুধের প্রয়োজন। দ্রুততম সময়ে প্যাক্সোভিরের মতো ওষুধ বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে, এটি ইতিবাচক।
দেশে করোনায় মৃত্যু কমাতে প্যাক্সোভির ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্যাক্সোভিরের মতো ওষুধ বাংলাদেশে নিয়ে আসা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে এই ওষুধের যেন অপব্যবহার ও অতিব্যবহার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ জলিল বলেন, করোনা মহামারিতে যে ওষুধই আসছে, সেটাকেই গেম চেঞ্জার বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার নতুন ধরনের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে, সেটি সময় বলে দেবে। ওষুধের মূল্যের চেয়ে একজন ব্যক্তির জীবনের মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় ওষুধের জরুরি ব্যবহার করতে হবে।
অল্প সময়ের ব্যবধানে এসকেএফ করোনা চিকিৎসায় প্যাক্সোভিরসহ তিনটি ওষুধ বাজারে এনেছে। এর আগে রেমিভির ও মনুভির নামে দুটি ওষুধ তারা বাজারে এনেছিল। দেশে করোনার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আনার ক্ষেত্রে এসকেএফ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ টিটু মিয়া। তিনি বলেন, ভাইরাসের তীব্রতা কমানো গেলে রোগীর পরিস্থিতি কম জটিল হয়। যাদের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, তাদের প্যাক্সোভির দেওয়া গেলে মৃত্যুর আশঙ্কা কমে।
দেশে করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধের অতিব্যবহার ও অপব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, প্যাক্সোভিরের মতো ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সতর্ক থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এ হাসান বলেন, মৃদু ও মাঝারি উপসর্গ রয়েছে, বাড়িতে থাকা এমন রোগীদের ক্ষেত্রে প্যাক্সোভির যুগান্তকারী ওষুধ।
প্যাক্সোভিরের মাধ্যমে করোনা মহামারির শেষের শুরু হতে পারে বলে মনে করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জি কে এম শহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, প্যাক্সোভির মৃত্যু ও হাসপাতালের ভর্তির সম্ভাবনা কমায় ৮৯ শতাংশ। করোনা চিকিৎসায় এই ওষুধ বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
কোন রোগীর ক্ষেত্রে প্যাক্সোভির ওষুধ ব্যবহার করা হবে, সেটি নির্ধারণ করা জরুরি বলে মনে করেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ইসমাইল পাটোয়ারী। তিনি বলেন, যাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা (কোমোরবিডিটি) রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে প্যাক্সোভির জীবন রক্ষাকারী হবে।
এসকেএফের মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই এসকেএফ নানাভাবে এগিয়ে এসেছে। বিশ্বে করোনার যে ওষুধই অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলো স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে এসকেএফ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এসকেএফের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী পরিচালক বিনয় দাস। সঞ্চালনা করেন এসকেএফের মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মুরাদ হোসেন।
সূত্র: প্রথম আলো