শিরোনাম
দেশের করোনা পরিস্থিতি বদলে গেলে বদলে যায় হাসপাতালের চিত্রও। রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন রোগীর চাপ কম থাকলেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে কয়েক গুণ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বলেছেন, ঢাকার হাসপাতালগুলোর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছেন। এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী এক মাসে ঢাকার কোনও হাসপাতালে শয্যা খালি থাকবে না।
মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এরমধ্যে ঢাকায় বেড়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ।’
ঢাকায় রোগী বাড়ছে বেশি
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে রোগী বাড়তে শুরু করে। তখন দিনে শনাক্ত ছিল ১ হাজার ১১৬ জন। একদিন পর শনাক্ত বেড়ে দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর তিন হাজারের কাছাকাছি গেলেও পরে তা চার হাজার ও পাঁচ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর আবার একলাফে বেড়ে আট হাজারের ঘরে চলে যায় শনাক্ত।
সম্প্রতি একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ১০ হাজার ৮৮৮ জন। ৮ জানুয়ারি ৮৯.৫ শতাংশ সাধারণ বেড খালি ছিল ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে। তথ্য বলছে, ৬৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড খালি আছে। অর্থাৎ ১৫ দিনে ২৩ শতাংশ বেডে রোগী বেড়েছে।
অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ দিন আগে ৯২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড খালি ছিল। রবিবার বেড খালি আছে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ। ১৫ দিনে রোগী বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বাড়ছে চাপ, হাসপাতালও প্রস্তুত
সারাদেশেই রোগীর চাপ বাড়ছে বলে পরিসংখ্যান বলছে। দেশে ১৫ দিন আগে ৯৪ দশমিক ২৯ শতাংশ সাধারণ বেড খালি ছিল। এখন খালি ৮৩ শতাংশ। দিনে ১ শতাংশের বেশি হারে খালি বেড কমছে।
ঢাকাসহ সারাদেশের কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে কথা বলে জানা গেছে, কিছু কিছু হাসপাতালে করোনা ইউনিটে বেড খালি নেই। তবে কোনও হাসপাতালের পুরোটাই খালি।
ঢাকা মেডিক্যালে গত দুই সপ্তাহে করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তির হার ৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আইসিইউতে তুলনামূলক কম রোগী বাড়লেও এইচডিইউতে চাপ বাড়ছে। সেখানে ৪০টি বেডের ১৮টিতেই রোগী আছে।
উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৩০ শতাংশের বেশি রোগী বেড়েছে। তবে ৭০ শতাংশের মতো বেড ফাঁকা আছে বলে জানা গেছে।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বেড খালি নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সায়েদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আইসোলেশন এবং কেবিন মিলে আমাদের যে ৩০টি বেড আছে সবগুলোই রোগীতে পূর্ণ। করোনা পরিস্থিতি বদলানোর আগপর্যন্ত পাঁচ জন ভর্তি ছিল। প্রতিদিন কিছু রোগী ছাড়া পাচ্ছেন। তবে দেখা যায়, পাঁচ জন ছাড়া পেলে ভর্তি হচ্ছেন সাত জন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনকার রোগীদের মধ্যে তীব্রতা কম পাচ্ছি। যে কারণে আইসিইউতে নিতে হচ্ছে না। অবশ্য আমাদের আইসিইউ বেড এখন খালি নেই। সেখানে সব নন-কোভিড রোগী। তবে প্রস্তুতি আছে। চিকিৎসক নার্সরা দিনরাত কাজ করছেন। অক্সিজেন, ওষুধ নিয়েও সংকট নেই।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে রোগী ভর্তি বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৪-৫ শতাংশ বেড়েছে। আইসিইউতে তুলনামূলক কম রোগী বাড়লেও এইচডিইউতে চাপ বাড়ছে। তবে আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা গত ৩-৪ মাসের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এটি অব্যাহত আছে। আমাদের সামর্থ্য অসীম নয়। কাজেই সীমিত সম্পদের ব্যবহারে আমাদের দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন