করোনার নতুন ঢেউয়ে বাংলাদেশ, রোগী বেড়েছে ২০০ শতাংশ

ফানাম নিউজ
  ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৩৮

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনার পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। এই এক সপ্তাহে দেশে একের পর এক করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্স করে ৩৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৩০ জন ঢাকার এবং ৩ জন যশোরের। বিগত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশ।

এক সপ্তাহ আগেও শনাক্তের হার এক অঙ্কের ঘরে থাকলেও আজ তা ১২ শতাংশ অতিক্রম করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, এভাবে রোগী বাড়লে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১১ দফা নির্দেশনায় এই সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিনে ১৫ হাজার ৮৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।  ৬ জানুয়ারি শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৮৬। ৮ দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ০৩। সর্বশেষ গত বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময় আগস্ট –সেপ্টেম্বর মাসে এরকম রোগী পাওয়া গেছে। তবে তখনকার তুলনায় এখন মৃত্যুর হার কম হলেও সামনের দিনগুলোতে তা বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত সাত দিনে মৃত্যু এক অঙ্কের ঘরে থাকলেও ১৩ জানুয়ারি ১২ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্তের কথা প্রথম জানা যায় ১০ ডিসেম্বর। জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের নমুনায় তা শনাক্ত হয়। এরপর ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর আরও ৫ জনের নমুনায় ওমিক্রন শনাক্ত হয়। তারপর ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৬ জনের নমুনায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার খবর জানা যায়। শনাক্ত হওয়া অধিকাংশ নারী এবং ৩০ জনই ঢাকায় অবস্থান করছেন। সর্বশেষ বুধবার ঢাকার বাইরে একমাত্র স্থান হিসেবে যশোরে ৩ জনের নমুনায় ওমিক্রিন শনাক্ত হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, নতুন করে আক্রান্তদের চিকিৎসায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আরও ২০ হাজার শয্যা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক হাসপাতালে শয্যা খালি থাকলেও আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। সব হাসপাতাল রোগীতে ভরে যেতে শুরু করবে। ১০-১৫ দিন আগেও শনাক্ত রোগী দিনে দুই থেকে আড়াইশ’ জন ছিল, বর্তমানে সেটি তিন হাজারের কাছাকাছি।

তিনি আরও বলেন, এক সপ্তাহ আগেও হাসপাতালে গড়ে আড়াইশ ‘র মতো রোগী ছিল, যা এখন হাজারে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। চিকিৎসকদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে। এটা শুরু হলে স্বাস্থ্য খাতকে বেকায়দায় পড়তে হবে।

সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, মনে হচ্ছে নতুন ঢেউ এসে গেছে। আমাদের সংক্রমণের হার বাড়ছেই। সেটার ঢেউ তো চলেই আসছে। একমাত্র স্বস্তির জায়গা হলো, সংক্রমণের হার যতই হোক এই মুহূর্তে মৃত্যুর হার কম। দুই সপ্তাহ পরে কী হবে সেটা বলা মুশকিল।

তিনি আরও বলেন, সরকারের ঘোষিত ১১ দফার মৌলিক সমস্যা হচ্ছে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। শুধু বললেই হবে না যে মাস্ক পরতে হবে। সেটা পরাতে বাধ্য করতে হবে। লোকজনকে বলবে মাস্ক পরানোর কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। তাদের সম্পৃক্ততার কথা তো সেখানে নেই। এটা তদারকি করবে কে সেটি বলা হয়নি। বাস্তবায়ন তো একার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না। অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার দায়িত্ব আছে। তাদের মধ্যে সমন্বয় দরকার। লকডাউন দিয়ে যে লাভ হয় না তা আমরা আগেই দেখেছি। সুতরাং মাস্ক পরার ওপর জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালন না করলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

স্বাস্থ্য এর পাঠক প্রিয়