শিরোনাম
করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। ব্যাপক রূপান্তরিত করোনার এ সংস্করণকে বড় উদ্বেগজনক ধরন বলছেন বিজ্ঞানীরা। ধরনটির ক্ষেত্রে বিদ্যমান টিকা কাজ করবে কি না, সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিবিসি অনলাইনের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।
নতুন ধরনটি কী
বিশ্বে করোনার হাজারো ধরন বা ভেরিয়েন্ট রয়েছে। করোনাভাইরাস সব সময় রূপান্তরিত হয়। এ কারণে করোনার হাজারো ধরন সৃষ্টি হওয়া অপ্রত্যাশিত কোনো বিষয় নয়।
সম্প্রতি আফ্রিকায় করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ধরনটির প্রাথমিক নাম দেওয়া হয়েছিল ‘বি.১.১.৫২৯’। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গ্রিক অক্ষর অনুযায়ী করোনার নতুন ধরনটির নাম দেয় ‘অমিক্রন’।
ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে ডব্লিউএইচও। করোনার আগের সব ধরনের চেয়ে এটি অনেক বেশি সংক্রামক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অমিক্রন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিশেষভাবে চিন্তিত। কারণ, ধরনটি করোনার মূল সংস্করণের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। করোনার মূল সংস্করণকে ধরেই বিদ্যমান টিকাগুলো তৈরি করা হয়েছে।
নতুন শনাক্ত ধরনটির অনেকবার জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনের এই সংখ্যা অন্তত ৫০। তার মধ্যে ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন এসেছে ৩২ বার। টিকা তৈরির ক্ষেত্রে এই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
তবে করোনার নতুন ধরনটি ঠিক কতটা হুমকির, তা এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব নয়।
টিকা কি কাজ করবে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান যে টিকাগুলো আছে, সেগুলো করোনার নতুন ধরনটির ক্ষেত্রে আদর্শ নয়। তাই বিদ্যমান টিকা খুব ভালোভাবে কাজ নাও করতে পারে।
কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে বিদ্যমান টিকা কোনো সুরক্ষাই দেবে না।
লক্ষণীয় বিষয় হলো ডেলটা, আলফা, বিটা, গামাসহ করোনার প্রধান ধরনগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্যমান টিকাগুলো এখনো খুব কার্যকর। এ ধরনগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান টিকা গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কমিয়ে জীবন রক্ষা করছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনার বিদ্যমান ও উদীয়মান ধরনগুলোর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সুরক্ষা পেতে লোকজনের অবশ্যই সুপারিশকৃত টিকা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাজ্যে করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে চলেছে। তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের ঢেউগুলোর চেয়ে অনেক কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের কারণেই এমনটা হয়েছে।
করোনার সবশেষ ধরনটি রুখতে টিকা কার্যকর কি না কিংবা কতটা কার্যকর, তা যাচাইয়ে বিজ্ঞানীরা ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন।
অমিক্রন করোনার একেবারেই নতুন ধরন। এটির সম্ভাব্য মিউটেশন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করবেন। বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করবেন যে করোনার অন্যান্য ধরনের চেয়ে অমিক্রন আরও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে কি না।
নতুন টিকা কত দ্রুত আসতে পারে
যদি প্রয়োজন হয়, এ বিবেচনায় করোনার বিভিন্ন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকার হালনাগাদ সংস্করণের নকশা তৈরি ও পরীক্ষার কাজ চলছে।
তেমন পরিস্থিতি যদি আসে, তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন টিকা প্রস্তুত হয়ে যেতে পারে।
উৎপাদনকারীরা খুব দ্রুত নতুন সেই টিকার উৎপাদন বাড়াতে পারবে। আর নিয়ন্ত্রকেরা কীভাবে নতুন টিকার অনুমোদনপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে, সে আলোচনা ইতিমধ্যে করেছে।
পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে করোনার প্রথম টিকা পেতে যতটা সময় লেগেছে, নতুন টিকা তার চেয়ে অনেক দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাতে পাওয়া যাবে।