শিরোনাম
করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে করোনার উদ্বেগজনক ধরন হিসেবে বর্ণনা করছে। নতুন এ ধরনের বিস্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। জারি হচ্ছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। এ ভাইরাস নিয়ে আবার চেনা এক উদ্বেগ নতুন করে দেখা দিয়েছে।
সবশেষ শনাক্ত হওয়া নতুন এ ধরন এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশিবার জিনগত রূপ বদল করা সংস্করণ। এর জিনগত রূপ পরিবর্তনের তালিকা এত দীর্ঘ যে একজন বিজ্ঞানী একে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন। অপর এক বিজ্ঞানী বলেছেন, তাঁর দেখা ধরনগুলোর মধ্যে নতুন এ ধরন সবচেয়ে মারাত্মক।
মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার এক প্রদেশে এ ধরনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যেই আফ্রিকার অন্যান্য দেশ এবং ইউরোপ ও এশিয়ায় এ ধরন শনাক্ত হয়েছে। আগামী দিনগুলোয় বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও এ ধরন ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
নতুন এ ধরন শনাক্ত হওয়ার পর এ মুহূর্তে যে প্রশ্নগুলো সবার মনে আসছে, সেগুলো হলো এটি কত দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে এবং ধরনটি কি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিদ্যমান টিকাগুলো থেকে পাওয়া সুরক্ষা ভেদ করতে পারবে? অনেক জল্পনা থাকলেও এখনই এর স্পষ্ট উত্তর মিলছে না।
ধরনটি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের নতুন এ ধরনের নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন’। গ্রিক বর্ণমালা দিয়ে এর আগে যেমন আলফা ও ডেলটার নামকরণ হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই এ ধরনের এমন নাম দেওয়া হয়েছে। নতুন নাম দিয়ে সংস্থাটি ওমিক্রনকে করোনাভাইরাসের ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ধরনটি জিনগত রূপ বদলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভেরা বলেন, ওমিক্রন বহুবার ‘অস্বাভাবিকভাবে রূপ বদল’ করেছে। এ পর্যন্ত ছড়ানো ধরনগুলোর চেয়ে এটা ‘অনেকটাই আলাদা’। তিনি আরও বলেন, ‘ধরনটি আমাদের খুব অবাক করেছে, বিবর্তিত হওয়ার জন্য বড় বড় ধাপ পার হয়েছে এবং ধারণা অনুযায়ী অনেকবার জিনগত রূপ বদলেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অলিভেরা আরও বলেন, ওমিক্রন এখন পর্যন্ত ৫০ বার রূপ বদল করেছে এবং স্পাইক প্রোটিনের বদল ঘটেছে ৩০ বারের বেশি। দেহকোষে ঢুকে পড়ার জন্য যেকোনো ভাইরাস মূলত এ স্পাইক প্রোটিনকে ব্যবহার করে এবং স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করেই বেশির ভাগ টিকা তৈরি করা হয়।
নতুন এ ধরনে আরও উদ্বেগের বিষয় রয়েছে। ভাইরাসের যে অংশ প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায়, তার নাম রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন। ওমিক্রনের সেই রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন ১০ বার রূপ পরিবর্তন করেছে। এর আগপর্যন্ত শনাক্ত সবচেয়ে সংক্রামক ডেলটা ধরনের ক্ষেত্রে এ বদল ঘটেছিল মাত্র দুবার।
এ ধরনের জিনগত রূপবদল খুব সম্ভবত এমন এক রোগীর কাছ থেকে এসেছে, যিনি এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে পারেননি। তবে এই রূপবদল যে সব সময় খারাপ, ব্যাপারটা আবার তেমনও না। এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে জিনগত রূপবদলের ফল আসলে শেষমেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টি হলো চীনের উহানে প্রথম যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছিল, ওমিক্রন তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। এর মানে হলো করোনার মূল ধরনকে মাথায় রেখে তৈরি করা বিদ্যমান কোভিড টিকাগুলো নতুন এ ধরনের বিরুদ্ধে অতটা কার্যকর নাও হতে পারে।
এর আগেও অন্যান্য ধরনে কিছু জিনগত রূপবদলের বিষয়টি দেখা গেছে। এসব থেকেই হয়তো ওমিক্রনের ভবিষ্যৎ রূপান্তর নিয়ে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলছেন, ‘এ ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা এবং এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আরও বেশি। এসব আমাদের শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও সম্ভবত এর রয়েছে।’
তবে এমন উদাহরণও আছে, কাগজে-কলমে অনেক ধরনকে বিপজ্জনক মনে হলেও পরে দেখা যায় তেমন কিছুই নয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে বেটা ধরন নিয়ে সবার মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। কারণ, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে বেটার জুড়ি ছিল না। কিন্তু ডেলটা ধরন আরও দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবি গুপ্ত বলছেন, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়া ছাড়া বেটা আর কিছুই করতে পারত না। ডেলটার সংক্রমণের ক্ষমতা ছিল বেশি এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকেও মোটামুটি ফাঁকি দিতে পারত। কিন্তু নতুন ধরন ওমিক্রন দুদিক থেকেই সমানভাবে পারদর্শী।
ওমিক্রন নিয়ে গবেষণা থেকে হয়তো ধরনটি সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণাও পাওয়া যাবে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে কীভাবে এ ধরন ছড়িয়ে পড়ছে, সেটা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আরও দ্রুত বাস্তব চিত্রটা বোঝা যাবে। এ ধরন নিয়ে এখনই উপসংহারে পোঁছানো না গেলেও যেসব ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।