দেশে হানা দিতে পারে ওমিক্রন, সচেতনতা জরুরি

ফানাম নিউজ
  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১১:৪৮

দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। যা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে একে ‘উদ্বেগের ভ্যারিয়েন্ট’ বলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ফ্লাইট বাতিল করেছে ব্রিটেন। একইসঙ্গে ওই দেশগুলো থেকে আসা ব্রিটিশ ভ্রমণকারীদেরও কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওমিক্রন বি.১.১.৫২৯ নামের ভ্যারিয়েন্টটি করোনার সবচেয়ে বেশিবার জিন বদলানো সংস্করণ। দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকংয়ে মোট ৫৯ জন এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের সর্তক হওয়া প্রয়োজন কতটুকু জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহীদুল্লা বলেন, ‘নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে প্রাথমিক কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। তবে এর ছড়ানোর ক্ষমতা ও তীব্রতা বাড়াতে পারে। ভ্যাকসিন প্রটেকশনকে এটি এসকেপ (টিকা কাজ করবে কিনা) করবে কিনা-এই কথাগুলোও উঠে আসছে।’

এই কারণেই মূলত বিশ্বের কয়েকটি দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেউ দক্ষিন আফ্রিকা থেকে এলে তাদেরকে কোয়ারেন্টিন করতে হবে।

তবে আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের যাতায়াত কম মন্তব্য করে অধ্যাপক সহীদুল্লা বলেন, তারপরও কেউ যদি আসে, অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও কোয়ারেন্টিন করার চিন্তাভাবনা করতে হবে।

ডা. সহীদুল্লা আরও জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানায় যে উদাসীনতা দেখতে পাচ্ছি এতে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে আবার সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি থাকে। সে আলোকে আবারও কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের হোটেল-মোটেল-পর্যটন সব খুলে গেছে। সেখানে ভিড় হচ্ছে। কেউ মাস্কও পরছে না। এটা বিপজ্জনক হবে।’

নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর কী ভাবছে জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘আগামী দুদিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত দুই মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’

‘কাল-পরশুর মধ্যে পাবলিক হেলথ এক্সপার্টদের সঙ্গে একটি মিটিং হবে। সেখানকার সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেবো। আমরা পলিসি মেকার নই, প্রস্তাবনা দেবো। সেটা তারা গ্রহণ করলে আমরা বাস্তবায়নে যাব।’ বলেন অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে অবশ্যই সতর্কতা নেওয়া উচিত। সীমান্তবর্তী এলাকা, এবং যেসব এন্ট্রি পয়েন্ট রয়েছে সেখানে সার্ভিলেন্স জোরদার করতে হবে। এয়ারপোর্টগুলোকে নজরদারিতে রাখতে হবে। সেখানে পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ভারতের সঙ্গে অনেক ল্যান্ডপোর্ট রয়েছে, সেখানে নজরদারি বাড়াতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে ইতোমধ্যেই এই ভ্যারিয়েন্ট না এলেও রোগী বাড়ছে। সেখান থেকে আমাদের এখানে আসতেই পারে।’

যেটা আমরা আগেও দেখেছি মন্তব্য করে অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল আরও বলেন, ‘ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে ঢুকলো। তারপর শুরু হলো ডেল্টার তাণ্ডব। একই অবস্থা এবারও হতে পারে। সর্তক থাকতে হবে। নয়তো ডেল্টার মতো ভয়ংকর অবস্থা দেখতে হবে।’

‘যে মানুষগুলো পজেটিভ হচ্ছে, তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে কঠোরভাবে। নয়তো বিপদ আসতে সময় নেবে না। আর তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ক্ষেত্রেও জোরদার হতে হবে।’ বলেন আবু জামিল ফয়সাল।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

স্বাস্থ্য এর পাঠক প্রিয়