শিরোনাম
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী স্বদেশে ফিরতে চায়। দেশে ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বিপদের সময় আশ্রয় দেওয়ায় তারা বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞ। সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিন ঘুরে তাদের এমন আকুতির কথা জানা গেছে। সূত্র: যুগান্তর
কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক জান্তার গণহত্যার মুখে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। স্বদেশে ফিরে যেতে রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে রোহিঙ্গারা তাকিয়ে আছে। তারা চায়, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর পদক্ষেপ নিক। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আমরা অন্য দেশে বসে কর্মহীন সময় কাটাতে চাই না। নিজেদের দেশে ফিরে কাজ করে জীবন ধারণ করতে চাই।
নব্বইয়ের দশকে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন টেকনাফের নোয়াপড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা কালু মিয়ার বাবা-মা। বাংলাদেশে কালু মিয়ার জন্ম। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক শ্রমিক হিসাবে কাজ করেছেন। কিন্তু কোথাও তিনি থিতু হওয়ার চেষ্টা করেননি। ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পরপর তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হয় মিয়ানমারের। তখন নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার আসায় কালু ট্রাক শ্রমিকের কাজ ছেড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। বছর দেড়েক আগে ক্যাম্পেই বিয়ে করেন। চার মাসের একটি সন্তান আছে তার। সোমবার নিজের ঘরের সামনে কালু বলেন, বাংলাদেশে জন্ম হলেও এটা তো আমার দেশ নয়। আমার দেশ মিয়ানমার। সেখানে আমার পারিবারিক সম্পত্তি আছে। সেখানে গিয়ে আমি বসবাস করতে চাই। মিয়ানমারে আমার বোনের পরিবার আছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তার কাছে আমাদের পারিবারিক সম্পত্তির সব দলিলপত্র আছে।
মঙ্গলবার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, সারাদিন বয়ে-শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না। দেশে গিয়ে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে চাই। এভাবে অন্যের দয়ায় কতদিন থাকব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার দয়া করে আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের দেশে ফেরাতে শুধু বাংলাদেশের চেষ্টায় কাজ হবে না। এজন্য বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সহযোগিতা দরকার। আমাদের দেশে ফিরতে বিশ্বের বড় দেশগুলো মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ দিক তা আমরা চাই।
একইদিন বিকালে স্কুল থেকে ঘরে ফিরছিল নয় বছরের শিশু মনসুর উল্লাহ। অন্যজনের সহযোগিতায় শিশুটির সঙ্গে কথা বললে সে জানায়, তাদের এখানে মিয়ানমারের ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। সঙ্গে ইংরেজি ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। মনসুরের সঙ্গে থাকা তার মা আছিয়া বেগম জানান, মিয়ানমারে থাকার সময় তা সন্তান বাড়ির উঠানে দৌড়াদৌড়ি করত। নিজেও বড় ঘরে সংসার করতেন। এখন ছোট্ট খুপরি ঘরে তার জীবনের সব স্বপ্ন ঝাপসা হয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমার জীবন তো শেষ হয়ে গেল। আমার সন্তানকে যেন সারা জীবন এভাবে থাকতে না হয়। তিনি বলেন, বিদেশিরা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) চেষ্টা করলে আমরা দেশে ফিরতে পারব। সেই চেষ্টা যেন ভালো করে হয়।
সোম ও মঙ্গলবার কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে-রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপন তুলনামূলক সহজ করতে সরকার ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সহযোগিতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে সুপেয় পানি সরবরাহে বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির অভাবে প্রথমে রোহিঙ্গাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি ক্যাম্পে এডিবিসহ কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের সহযোগিতায় বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সেই পানি বিশুদ্ধ করে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভালোমানের খাবার পানি পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ‘জরুরি সহায়তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটির পরিচালক আব্দুল হালিম খান বলেন, টেকনাফ ও উখিয়া এলাকায় সুপেয় পানি শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্যও একটি বড় সমস্যা। এখন পানির বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পানি শোধনে বড় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যাতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে চলে গেলেও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যায়।