শিরোনাম
আধুনিক নগরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রায় স্ট্রেস বা মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা কার্যত অসম্ভব৷ কিন্তু সব স্ট্রেসই কি ক্ষতিকর? মানসিক চাপের বিভিন্ন দিক, সেই চাপ সামলানোর নানা উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নানা মত রয়েছে৷
পরিবহণ, কর্মক্ষেত্র ও পরিবারের কারণে লাগাতার চাপ সত্ত্বেও কি জীবন উপভোগ করা সম্ভব? ডিজিটাল প্রযুক্তি ও সর্বদা যোগাযোগের তাগিদের মাঝেও কি নিরুদ্বেগ থাকা যায়? মানুষ চিরকালই চাপ সামলে এসেছে, কিন্তু সে বিষয়ে সর্বদা অভিযোগ করা আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে৷ স্ট্রেস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে পরিচিত৷ নাকি সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে? অর্থাৎ স্ট্রেস কি সত্যি রোগের কারণ হতে পারে?
এই প্রশ্নের জবাবে সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্ট ড. ইসাবেলা হেল্মরাইশ বলেন, স্ট্রেস কিন্তু মোটেই খারাপ কিছু নয়৷ স্ট্রেস জীবনের অঙ্গ হলেও ভারসাম্যের বিষয়টি সব সময়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ অর্থাৎ কখনো কখনো আমি নিজের অগ্রগতির স্বার্থে প্রয়োজনীয় মানসিক চাপের মুখে পড়লে ক্ষতি নেই৷ অন্যদিকে কিন্তু আমার শান্তি ও নিজেকে চাঙ্গা করে তোলার পর্যায়েরও প্রয়োজন৷
বার্লিনের ভিভান্টেস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ প্রোফেসর ড. আন্দ্রেয়াস বেশডল্ফও এ বিষয়ে একমত৷ তার মতে, ভালো স্ট্রেস বলেও কিছু রয়েছে৷ যেমন শারীরিক কসরতের সময় সেটা কাজে লাগে৷ অর্থাৎ কোনো অ্যাথলিট অন্তরের ডাক শুনে ১০০ মিটার দৌড়ের সময় এমন পজিটিভ স্ট্রেস অনুভব না করলে চলে না৷ অন্যথায় সে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে, সব সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তার বিশেষ ক্ষমতা দেখাতে পারবে না৷ আমাদের সেটা না থাকলে কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা অনেক কম ক্ষমতা দেখাতাম৷
অর্থাৎ, স্ট্রেস মোটেই তেমন খারাপ কিছু নয়৷ যেমন স্ট্রেস নাকি রোগা করে দেয়৷ সেটা কি সত্যি? স্ট্রেস হলে কি সত্যি ওজন কমে? প্রফেসর ড. বেশডল্ফ বলেন, রোগা হওয়ার দুটি দিক রয়েছে৷ কোনো বিশেষ মুহূর্তে স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিশেষ চাপ অনুভব করলে বেশিরভাগ মানুষের খিদে কমে যায়৷ তখন তারা কম খায়৷ ড. হেল্মরাইশ অবশ্য সেইসঙ্গে আরেকটি সতর্কবার্তা জুড়ে দিয়ে বলেন, স্ট্রেসের অন্য সমস্যা হলো, স্ট্রেস আমাদের হরমোন প্রণালীর উপর প্রভাব বিস্তার করে৷ ফলে বাড়তি কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ ঘটে৷ সেই কারণে বরং আমাদের শরীরে আরও বেশি ক্যালোরি জমা হয়৷
প্রত্যেক জীবের প্রতিক্রিয়া হয় ভিন্ন৷ আমরা আমাদের স্ট্রেস ঠিক কীভাবে অনুভব করি এবং প্রত্যেকে কীভাবে সেটির ধাক্কা সামলায়, তার উপরেও বিষয়টি নির্ভর করে৷ এ ক্ষেত্রে কি নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে? অর্থাৎ সব মানুষের ক্ষেত্রে স্ট্রেসের প্রভাব কি সমান? ড. ইসাবেলা হেল্মরাইশ বলেন, যেমন নারীরা নিজেদের স্ট্রেস সম্পর্কে বেশি কথা বলেন বা সে রকম পর্যায়ে মুষড়ে পড়েন, অবসাদে ভোগেন৷ অন্যদিকে পুরুষরা স্ট্রেস হলে আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখান৷
প্রোফেসর ড. আন্দ্রেয়াস বেশডল্ফ এ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, প্রতিযোগিতার মুখে পুরুষরা বেশি মানসিক চাপ অনুভব করেন৷ অন্যদিকে নারীরা সামাজিক স্তরে নেতিবাচক আদান প্রদানের সময় স্ট্রেসে ভোগেন৷ যেমন কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে কোণঠাসা বোধ করলে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি স্ট্রেস অনুভব করেন৷
বাসায় অরাজকতা এবং কাজের ক্ষেত্রেও প্রবল চাপ থাকলে মাথা যেন খারাপ হয়ে যায়৷ স্ট্রেস কমানোর কোনো কৌশল আছে কি? প্রফেসর ড. বেশডল্ফ মানসিক চাপের মুখে কিছু রক্ষাকবচের উল্লেখ করে বলেন, নিজের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও নিয়মিত ঘুমানো, যথেষ্ট খাওয়াদাওয়া করা প্রয়োজন৷ স্ট্রেসের পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্যদের সঙ্গে আদানপ্রদান, সাধারণভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও সাহায্য করে৷ সেইসঙ্গে গতিশীল থাকলে ভালো হয়৷ সাধারণত মুভমেন্ট স্ট্রেসের মাত্রা কমিয়ে দেয়৷
ড. হেল্মরাইশ সেইসঙ্গে নিজস্ব মনোভাব সম্পর্কে সচেতন হবার পরামর্শ দেন৷ তিনি বলেন, স্ট্রেস মোকাবিলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজের স্ট্রেস মেনে নেওয়া৷ অর্থাৎ নিজের স্ট্রেসের উপসর্গ ভালো করে চিনতে হবে, স্ট্রেসের উৎস জানতে হবে৷ যেমন আচমকা বেশি খাওয়াদাওয়া করা, অল্পেই রেগে যাওয়া, সহজে ঘুম না পাওয়ার মতো সতর্কতার সংকেত অনুভব করলে দ্রুত সে সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷
শারীরিক মানদণ্ড অনুযায়ী চুম্বনও স্ট্রেসের কারণ৷ কারণ সেই মুহূর্তে রক্তচাপ, পাল্স ও হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়৷ কিন্তু তাই বলে কি চুম্বন এড়িয়ে চলা উচিত? এ ক্ষেত্রে মাত্রাই মূল বিষয়৷ স্ট্রেসের ক্ষেত্রেও সেটা গুরুত্বপূর্ণ৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে