শিরোনাম
হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে শহরজুড়ে। ঢাকার অধিকাংশ হাসপাতালে দেখা মিলছে ভাইরাসজনিত রোগটিতে আক্রান্ত রোগী। অতি সংক্রামক এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মূলত শিশুরা। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। অনেকটা জলবসন্তের মতো এ রোগ মাত্রাতিরিক্ত ছোঁয়াচে। তবে আতংকিত হওয়ার মতো কোনো বিষয় নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, এ ভাইরাসে যে কোনো বয়সী মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে বেশি সংক্রমিত হতে দেখা যায় শিশুদের শরীরে। কক্সাকি ভাইরাসের কারণে এ রোগ হয়। কেউ যদি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যায় এবং তার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তবে যে কোনো বয়সেই আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত হলে দুই হাতের পাতা, কনুই, দুই পায়ের পাতা, হাঁটুর মালা এবং মুখের ভিতর জলবসন্তের মতো গোটা ওঠে। কিছু কিছু গোটায় পানি জমে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা মাজহার আলম বলেন, কিছুদিন আগে আমার ছেলের জ্বর হয়। এর পরের দিন দেখি হাতে, পায়ে ও মুখে র্যাশ মতো বের হয়েছে। প্রথমে জলবসন্ত মনে করলেও বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি জানান, এটি হ্যান্ড ফুট মাউথ রোগ। তবে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, এটি খুব দ্রুত সেরে যাবে। আট দিনের মাথায় ফুসকুড়ি কমে বাচ্চা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। এ রোগ আমাদের এলাকার অনেক শিশুর হয়েছে। খুব ছোঁয়াচে।
চিকিৎসকদের মতে এই রোগ অনেকটা জলবসন্তের মতো হলেও একজনের একাধিকবারও হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসির তথ্যমতে, এটি ছোঁয়াচে এবং আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহে বেশি ছড়ায়। রোগীর শরীরের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ, আক্রান্ত হওয়ার পর গোটা থেকে বের হওয়া তরল পদার্থ, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে যে ড্রপলেট বের হয়, মুখের লালা, সর্দি, মলের মাধ্যমে এর সংক্রমণ হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ রোগ প্রচণ্ড ছোঁয়াচে। খুব দ্রুত এটি সংক্রমণ ঘটায়। তবে এ রোগ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। আক্রান্ত হওয়ার ৩ থেকে ৬ দিনের মধ্যে অল্প তাপমাত্রা থেকে ১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর আসতে পারে।
‘এছাড়া গলাব্যথা হতে পারে। জ্বর আসার ২-৩ দিনের মধ্যে। হাত ও পায়েও র্যাশ দেখা দেবে। হাত, পা ও মুখ আক্রান্ত হওয়ার কারণে এই রোগকে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ বলে। র্যাশগুলো কিছুটা যন্ত্রণাদায়ক হয়, থাকতে পারে চুলকানিও। পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনও হতে পারে।’
এই রোগ নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে আসছেন জানিয়ে পরিচালক বলেন, ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রোগী এই সমস্যা নিয়ে আসছে। রোগী বাড়লেও এই রোগের জটিলতা কম। হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয় না। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যায়। তবে অনেক সময় মুখের ভিতরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। তখন বাচ্চা খেতে পারে না। সেক্ষেত্রে একেবারে খাওয়া-দাওয়া করতে না পারলে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দেই। এই রোগে সর্বোচ্চ তিনবার আক্রান্ত রোগীও আমরা পেয়েছি। তাই একবার হলে আবারও হতে পারে। ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
হ্যান্ড ফুট মাউথ রোগ হলে করণীয় কী জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অসুখটি সেরে যায়। এসময় বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাবে, ভিটামিন জাতীয় খাবার খাবে। বেশি করে পানি পান করবে। ওষুধ হিসেবে জ্বর হলে শুধু প্যারাসিটামল সেবন করবে। এছাড়া শরীরে ফুসকুড়িতে লোশন লাগাতে পারে, এন্টি হিসটামিন খাবে। মুখের ভিতরে হয়ে থাকলে তখন বাচ্চাদের খাওয়াতে কষ্ট হয়ে যায়। তখন তাদের স্যালাইন দেওয়া লাগতে পারে।