২৪ হাজার মানুষের জন্য ১ চিকিৎসক

ফানাম নিউজ
  ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১১:৪৭

‘সরকারি হাসপাতালে গেইলে ডাক্তারও নাই, ওষুধও নাই। হামার চর থাকি টাকা খরচ করি যায়া ডাক্তার পাই না। এ জন্যে হামরা গ্রাম্য ডাক্তারের চিকিৎসা নেই। হামাগো চরের মাইনষের কষ্ট কাউও বুঝবার চায় না। এক-দুইটা ডাক্তার উগি (রোগী) দেখে, ভিড়ও অনেক।’

বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চাঁকেন্দা খান পাড়ার মোজাম্মেল হক।

শুধু মোজাম্মেল নন, ডাক্তার সংকটে নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয় পুরো জেলার মানুষকেই। কুড়িগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। সেবা দিচ্ছেন ৯১ জন চিকিৎসক। হিসাব করে দেখা গেছে, ২৪ হাজার ১৭৫ জনের বিপরীতে চিকিৎসক একজন।

জেলা সিভিল সার্জনের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে ২০১টি পদে চিকিৎসক আছেন ৯৫ জন। তার মধ্যে চারজন বিভিন্ন কারণে জেলার বাইরে থাকায় এখন কাজ করছেন ৯১ জন।

৩৮১টি পদে নার্স আছেন ৩৩২ জন। অর্থাৎ সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষের জন্য একজন নার্স।

জেলার হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি ২৫০ শয্যার, একটি ৫০ শয্যার ও আরেকটি ৩১ শয্যার।

অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এই জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমন দশায় ভোগান্তির শেষ নেই মানুষের। জটিল রোগের চিকিৎসা তো পাওয়া যায়ই না, সাধারণ রোগের চিকিৎসা মেলাও কঠিন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল বা রংপুর, ঢাকায় যান। যাদের সেই সামর্থ্য নেই তারা গ্রাম্য ডাক্তার, কবিরাজের ওপর ভরসা করেন।

সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৭টি, সিভিল সার্জন অফিসে ২টি, বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে ১টি, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭টি, নাগেশ্বরীতে ৮টি, ভূরুঙ্গামারীতে ১১টি, ফুলবাড়ীতে ৮টি, রাজারহাটে ৯টি, উলিপুরে ১৩টি, চিলমারীতে ৯টি, রৌমারীতে ৭টি ও রাজিবপুরে ৩টি পদে চিকিৎসক আছেন।

চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ঠকের হাট ফইলমারী গ্রামের নজির হোসেন বলেন, ‘মেলা দিন থাকি হাঁপানি, হাড়ের সমস্যা, ডায়াবেটিস রোগে ভুগবার নাগছং বাহে। হাসপাতালে ভর্তি আছং সাত-আট দিন হইল। সারা দিনে ডাক্তার খালি একবার আইসে।

‘হাসপাতালে যে খাবার সেগলা খাওন যায় না। বাশি উটি(রুটি), পচা কলা। তরকারি-ভাত দেয় মুখত দেয়া যায় না। অনেক উগি না খায়া বাইরা কুকুর-বিড়ালকে দেয়। কাউও (কেউ) ঠেকাত পড়িয়া খায়। হামরা গরিব মানুষ, চিকিৎসা নিবার আসি। ওমার (তাদের) সাথে কাইজা(ঝগড়া) করবার তো আসি না।’

সদরের পৌর এলাকার ভেলাকোপা গ্রামের সেকেন্দার আলী বলেন, ‘কয়দিন থাকি গায়ত জ্বর। প্যাটের মধ্যে গ্যাসের ব্যথাও আছে। টেকা খরচ করি হাসপাতাল আসি ওষুধ পাই না। ডাক্তারও ঠিকমতো বইসে না। হামার গরিব মাইনষের অসুখ হইলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নাই।’

কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব নীলু জানান, পিছিয়ে পড়া উত্তরের এই জনগোষ্ঠীর জন্য হাসপাতালের শয্যা বাড়লেও জনবল বাড়েনি। শুধু চিকিৎসক নয়, টেকনোলজিস্টেরও ঘাটতি আছে। পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করতে জেলার বাইরে বা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়।

এসব সংকট দূর করে হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়ন করলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হতো বলে মনে করেন নীলু।

জেলা সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসক ও নার্স বাড়ানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন। এগুলো বাস্তবায়ন হলে এমন সমস্যা আর থাকবে না।’ সূত্র: নিউজ বাংলা

স্বাস্থ্য এর পাঠক প্রিয়