ডায়রিয়ার প্রকোপ রাজধানীতে, বাড়ছে রোগী

ফানাম নিউজ
  ০১ এপ্রিল ২০২২, ১৬:১৩
আপডেট  : ০১ এপ্রিল ২০২২, ১৬:১৮

রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতি গ্রীষ্মে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। চলতি বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে এবং মাসের মাঝামাঝি থেকে ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করে। সাধারণত এপ্রিলের শুরু থেকে ছয়-আট সপ্তাহ এর দাপট থাকে। 

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই বছর ডায়রিয়া যে শুধু আগেভাগেই শুরু হয়েছে তাই নয়, রোগীর সংখ্যাও আগের যেকোনো বছরের চাইতে অনেক বেশি।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম জানিয়েছেন ৬ মার্চ থেকে তারা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা খেয়াল করেছেন। ২৮ মার্চ থেকে রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল গড়ে প্রতিদিনই ১৩শ’র বেশি এবং রোগীর হার একই রকম রয়েছে।
 
ডা. বাহারুল বলেন, ‘২২ মার্চ একদিনে ১২৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে - যা আমাদের জন্য বেশ বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল। কারণ এখানে কখনোই একদিনে এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়নি।’

গত বছর এ রকম সময়ে হাসপাতালটিতে পাঁচশ মতো রোগী ভর্তি হতেন।

শুরুতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, কদমতলা, বাসাবো, মোহাম্মদপুর এলাকা থেকেই বেশি রোগী আসছিলেন। এখন ঢাকার প্রায় সকল এলাকা থেকে রোগী যাচ্ছে।

ঢাকার কাছের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকেও অনেক রোগী আসছেন।

প্রাপ্তবয়স্করাই বেশি ভর্তি হচ্ছেন এবং তীব্র পানিশূন্যতায় ভোগা রোগী সংখ্যায় অনেক আসছেন। তীব্র পানিশূন্যতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছেন ডা. বাহারুল আলম।

এ দিকে সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআর'র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর আগেভাগে ডায়রিয়া বাড়বাড়ন্ত প্রসঙ্গে কয়েকটি কারণের কথা জানান। এই বছর গরম একটু আগেই শুরু হয়েছে এবং এর সঙ্গে করোনাভাইরাস বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি পুরো শিথিল হয়ে যাওয়ার সম্পর্ক দেখছেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল, মানুষজনের চলাচল ও জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে, প্রচুর মানুষ ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিলেন।

‘অনেক কিছু ধীরে ধীরে খুলেছে। কিন্তু এখন সবকিছু একদম পুরো চালু হয়ে গেছে। সব মানুষ একসঙ্গে বের হয়েছে। সেই সঙ্গে মার্চেই আমরা ৩৪, ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠতে দেখেছি। এই ধরনের তাপমাত্রায় খাবারে দ্রুত জীবাণু জন্ম নেয়। কোন সময়ের পর আর খাবার খাওয়া উচিত না - সেটা মানুষ বুঝতে চায় না। আর রাস্তার খাবার, লেবুর শরবত – এ সব প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়রিয়ার জীবাণুগুলোর অন্যতম উৎস। সবাই একসঙ্গে এ সব খাচ্ছে এবং রোগটি ছড়াচ্ছে।’

তিনি মনে করেন, গত দুই বছর মানুষজন নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে ছিল। হাত পরিষ্কারের প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসা এবং স্বাস্থ্যবিধি শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজনের ঘনঘন হাত ধোয়া এবং জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করার প্রবণতা কমে আসছে।

ডায়রিয়ার জীবাণু ছড়ানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে পানি। ঢাকার যেসব এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে সেখানে কলের পানিতে সমস্যা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

ঢাকায় পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মূলত উৎসে পানির মান পরীক্ষা করে। কিন্তু প্রচুর এলাকায় পানির পাইপ ফুটো হয়ে সুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে মিশে গেছে এবং এই সমস্যা সারা বছরের।

ডা. আলমগীর বলছেন, ‘সাধারণভাবেই প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যে ডায়রিয়া হয় তার মধ্যে প্রধান কারণ কলেরা এবং ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া। এগুলো ছড়ানোর মাধ্যমই হচ্ছে এসব জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি ও পচা বাসি খাবার।’

তবে বাংলাদেশে কলেরার জীবাণুর উপস্থিতি সরকারিভাবে স্বীকার করা হয় না। কলেরা শব্দটির ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া হয়। বলা হয় মারাত্মক ডায়রিয়া।

অথচ আইসিডিডিআরবি, বি এবার তাদের হাসপাতালে ভর্তি প্রতি ৫০তম রোগীর মল পরীক্ষা করে যে ফল পাওয়া গেছে তা হলো ২৩ শতাংশের মতো রোগী কলেরায় আক্রান্ত। যদিও এটি পূর্ণ চিত্র নয়।

অন্যদিকে শিশুদের মধ্যে শীতকালে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। এই মৌসুমেও শিশুদের রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শিগেলা ব্যাকটেরিয়াও একটি কারণ।

সূত্র: দেশ রূপান্তর

স্বাস্থ্য এর পাঠক প্রিয়