শিরোনাম
শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনরত শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছেন। অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়সামিন হকের হাতে পানি পান করে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি আমার জীবনে এত আনন্দ আর কখনো পাইনি। তবে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমাতে যে প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছিল তা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়।’
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০ টা ২২ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক জাফর ইকবাল আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমাতে যে প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছিল তা ছিল অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়। এমন একটি অহিংস আন্দোলনে মেডিক্যাল সাপোর্ট খুব প্রয়োজন ছিল। তবে আমি এসে দেখলাম কোনও মেডিক্যাল সাপোর্ট নেই। যারা ছিল তাদেরকেও নানাভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা চেষ্টা করেও মেডিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
এসময় আবাসিক হলের ডাইনিং, ক্যাফেটারিয়া, টং দোকান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার খাবার দোকান বন্ধ করে এবং সর্বশেষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য রান্না করে দেওয়া বাবুর্চিদের ভয় দেখিয়ে খাবার সংকটে ফেলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে খাবার নিয়ে যে নিষ্ঠুরতা করা হয়েছে, তা স্বাধীন বাংলার ৫০ বছর পূর্তিতে করা হবে তা চিন্তার বাইরে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মানবিক সহায়তা দিয়ে আটক হওয়া শাবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবি করে তিনি আরও বলেন, যারা টাকা পয়সা দিয়েছে তারা হাজতে আছে, কোর্টে চালান দেওয়া হবে। তবে এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। আশা করছি এসব বিষয় যেন অবিলম্বে বন্ধ হয়। এছাড়া পুলিশের হামলার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলায় অজ্ঞাত ২০০-৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। এসব হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, আমাকে সরকারের ঊর্ধ্বতন অবস্থান থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধি পাঠিয়ে ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে যে কথা আমাকে দেওয়া হয়েছে, তা যেন রাখা হয়। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা যেন প্রত্যাহার হয়। নয়তো পুরো দেশের প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করা হবে।
এরআগে, মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই ড. জাফর ইকবালের ক্যাম্পাসে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৯টার দিকে তিনি ও ইয়াসমিন হক ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষককে নিজেদের মধ্যে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। বুধবার ভোর ৪টায় শাবি ক্যাম্পাসে পৌঁছান জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। পরে তারা ক্যাম্পাসে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ও বিস্তারিত ঘটনা শোনেন। এসময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তারা।
সম্প্রতি শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজ কলামে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মতামত জানান জাফর ইকবাল।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দীর্ঘদিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ও ইইই বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে ২০১৯ সালে অবসরে যান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার থেকে একই স্থানে অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও ৪ শিক্ষার্থী। বাসবভনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় ১৭ জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন