শিরোনাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মানবিক সহায়তা দেওয়ায় সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। আমি বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি আর্টিকেল লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। টাকাটা আমি তোমাদের (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) হাতে তুলে দিলাম। আমাকে অ্যারেস্ট করুক। আমি দেখতে চাই আমাকে এখন কে অ্যারেস্ট করে। তোমাদের সাহায্য করলে যদি অ্যারেস্ট হতে হয়, হোক। পুলিশের আইজিপির সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। আমি মিডিয়ার মাধ্যমে উনাকে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের অহেতুক পেটাবেন না। তাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। যা করেছেন তা করে অনেক বড় সর্বনাশ করেছেন।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ভোর ৪ টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক জাফর ইকবাল এসব কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গুলি অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এখন টেকনোলজির যুগ। সিসিটিভি লাগে না, সবার হাতে এখন মোবাইলফোন। সেই মোবাইলফোনের একটা ফুটেজ অন্তত দেখানো হোক, যেখানে আমার শিক্ষার্থীরা গুলি ছুড়েছে। তাই বলছি হয়রানি বন্ধ করেন।
এ সময় শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পুরো দেশে আলোড়ন তুলেছে উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা আসলে কি করেছো, তা বলে বোঝাতে পারবো না। তোমরা ইতিহাস গড়েছো। তোমাদের মাধ্যমে যে বার্তা গিয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের আগে একবার অন্তত ভাবা হবে। তোমাদের সঙ্গে দেশের সব তরুণ আছে।
তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে বললে তারা বলেন, সবাই মিলে একসঙ্গে অনশন ভাঙবেন। সে অনুযায়ী সকাল ৮টায় তারা অনশন ভাঙবেন। তবে শিক্ষার্থীরা একদিনও ভিসি ফরিদ উদ্দিনকে দেখতে চান না বলে দাবি তোলেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আটক সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি চান তারা।
এর জবাবে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক বলেন, আমাদের উপর মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এসব মামলা তুলে নেওয়া হবে। পাশাপাশি শাবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকেও আজ জামিন দেওয়া হবে।
এসময় ইয়াসমিন হক এবং জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের হল, ডাইনিং, টং, ফুডকোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের খাবার দোকান এবং বাবুর্চিদের দিয়ে রান্না করানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের অভুক্ত রেখে আন্দোলন নস্যাতের চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান।
তারা বলেন, আমরা শুনেছিলাম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। তবে এসে দেখলাম তা নেই। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের সহায়তা করছেন। এভাবে মেডিক্যাল ও খাবার সাপ্লাই বন্ধ করে আন্দোলন নস্যাতে চেষ্টা আর শিক্ষার্থীদের হত্যার চেষ্টা সমার্থক।
ড. জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জীবন অনেক মূল্যবান। তুচ্ছ বিষয়ে জীবন অপচয় করা যাবে না।’
অধ্যাপক জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘তোমাদের পানি পান না করিয়ে আমি ক্যাম্পাস ছাড়বো না। আমি তোমাদের সব কথা বলতে পারছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি তোমরা যা চাইবে, তোমাদের দাবি যা, তা পূরণ হবে।’
অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সিনিয়র শিক্ষকদের ঘটনার দায় নিতে বলেন। তারা সক্রিয় থাকলে ও আন্তরিক হলে আজকের পরিস্থিতি হতো না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই ড. জাফর ইকবালের ক্যাম্পাসে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৯টার দিকে তিনি ও ইয়াসমিন হক ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষককে নিজেদের মধ্যে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে তারা ক্যাম্পাসে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন ও বিস্তারিত ঘটনা শোনেন। পরে অনশনরত শিক্ষার্থীদের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তারা।
শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজ কলামে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মতামত জানান তিনি।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দীর্ঘদিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে ২০১৯ সালে অবসরে যান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার থেকে একই স্থানে অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। বাসবভনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় ১৭ জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন