শিরোনাম
পুলিশ ভ্যারিফিকেশন আর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফাঁদে আটকা পড়ে আছে সরকারি ও বেসরকারি হাইস্কুলে ৪০ হাজার নির্বাচিত শিক্ষক নিয়োগ। এর মধ্যে সরকারি হাইস্কুলে নিয়োগের লক্ষ্যে ২১৫৫ প্রার্থীকে গত ২৯ ডিসেম্বর নিয়োগের সুপারিশ করে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। সূত্র: যুগান্তর
বর্তমানে এসব প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। অন্যদিকে বেসরকারি হাইস্কুলের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসি) ৩৮২৮৬ প্রার্থীর নাম সুপারিশ করেছে। বিধান অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এসব প্রার্থীর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুপারিশপ্রাপ্তদের ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য সংগ্রহে পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফর্মে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এভাবে উভয় ধরনের প্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে। এতে শিক্ষক সংকটকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাত্র ২১শ প্রার্থীর পুলিশ ভ্যারিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সাড়ে ৮ মাস সময় গেছে। এটা শেষ করতে আরও কতদিন লাগবে, তা অনিশ্চিত। এ অবস্থায় ৩৮ হাজার প্রার্থীর একই ধরনের কাজ সারতে দুই বছরও পেরিয়ে যেতে পারে। এতে করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শিক্ষক-খরায় ভুগবে। গত মার্চ পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫৫ হাজার পদ শূন্য আছে। এই সংখ্যার সঙ্গে বর্তমানে আরও অন্তত ৫ হাজার যোগ হয়েছে। এছাড়া সরকারি হাইস্কুলে ২১৮০টি পদ শূন্য আছে।
সরকারি হাইস্কুলের প্রার্থীদের নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. সৈয়দ ইমামুল হক বলেন, সরকারি চাকরিতে পুলিশ ভ্যারিফিকেশন আর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগের সুযোগ নেই। মাঠপর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কাজ করতে একটু সময় প্রয়োজন। সেই সময়টাই লাগছে। তবে ভ্যারিফিকেশন কাজ শেষে বর্তমানে প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চলছে। সব প্রতিবেদন পেলে একটি নির্দেশনার মাধ্যমে সবার নিয়োগ আদেশ জারি করা হবে। আর বেসরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকদের সুপারিশের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। মন্ত্রণালয় ৩৮ হাজার প্রার্থীর কাজ একদিনে শেষ করে ফেরত পাঠিয়েছে। এখন প্রার্থীরা সময়মতো তাদের কাজ শেষ করলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সরকারি হাইস্কুল : গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর পিএসসি নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আবেদনকারীদের লিখিত পরীক্ষা হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্বাচিতদের ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য সংগ্রহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের কাজ শুরু করে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য অনুযায়ী, জাতীয়করণকৃত এবং পুরোনো মিলে দেশে বর্তমানে সরকারি হাইস্কুল ৬৮৭টি। এর মধ্যে পুরোনো ৩৫১টি। এসব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের পদ সাড়ে ১০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ২ হাজার ১৮০টিই শূন্য। নাম প্রকাশ না করে সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবসর, মৃত্যু এবং পদত্যাগসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষকের পদ শূন্য হচ্ছে। এতে শিক্ষক সংকট বাড়ছে। অন্যদিকে সর্বশেষ কারিকুলাম অনুযায়ী সরকার নতুন চারটি বিষয় যুক্ত করেছে মাধ্যমিকে। এগুলো হলো-তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), কর্মমুখী শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা। এসব বিষয়ের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি এবং কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষকের খুবই সংকট।
বেসরকারি হাইস্কুল : গত ৩০ মার্চ বেসরকারি হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৪ হাজার ৩০৪ শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ১০১টি পদ আছে, যার মধ্যে এমপিওভুক্ত পদ ২৬ হাজার ৮৩৮টি। মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে মোট ২০ হাজার ৯৯৬টি শূন্যপদ। এর মধ্যে ১৯ হাজার ১৫৪টি এমপিওভুক্ত। ২ হাজার ২০৭টি এমপিও পদে রিট মামলার বাদীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করা প্রার্থীদের মধ্য থেকে ৩৮ হাজার ২৮৬ জনকে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক সুপারিশপত্র ২৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এনটিআরসিএ। এর আগে একই প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরও দুবার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। কোনোবারই প্রার্থীদের পুলিশ ভ্যারিফিকেশন হয়নি। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেয়। সেই অনুযায়ী এনটিআরসিএ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফর্মের ৫ কপি পূরণ করে পাঠাতে নির্দেশনা দেয়। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা এনটিআরসিএতে পাঠানোর কথা। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত সবার প্রতিবেদন আসেনি বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে সংস্থাটির সচিব মো. ওবায়দুর রহমান (উপসচিব) বলেন, কতজনের প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি, তা এখনো গুনে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে অনেকের প্রতিবেদন ডাকে আসছে। এজন্য সময় লাগছে। সবার প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার তিনটি সেট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর ভ্যারিফিকেশন হয়ে এলে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুপারিশ করতে একটু সময় তো লাগবেই। কেননা এটা সারা দেশের পুলিশ সুপারের অফিসে যাবে। এরপর তা মাঠপর্যায়ে যাবে। এরপর ফের ঢাকায় ফেরত এলে আমরা কাজ করব। তিনি জানান, আমরা চাচ্ছি, এ মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে ৩৮ হাজারের ফাইলই পাঠাব।