তদন্ত কমিটিকে চুল কর্তনের ঘটনার বর্ণণা দিলেন নির্যাতিতরা

ফানাম নিউজ
  ০৪ অক্টোবর ২০২১, ০৭:০৯

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কর্তৃক ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি রোববার সকাল থেকে দিনভর ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে নির্যাতিত ১৩ ছাত্র কমিটির কাছে উপস্থিত হয়ে ও অসুস্থ এক ছাত্র হাসপাতাল থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী ১৫ শিক্ষার্থী, ৩ শিক্ষক, ৫ কর্মচারী ও ৫ জন অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থী সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ ছাড়াও গত ৩ বছরে তার স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন বিভিন্ন বিভাগের আরও ৮ শিক্ষার্থী। এ নিয়ে এদিন গভীর রাত পর্যন্ত মোট ৫০ জনের মত ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করেন।

দিনভর রবির কান্দাপাড়ার প্রশাসনিক ভবনের সেমিনার কক্ষে প্রত্যেককে পৃথক ভাবে ডেকে নিয়ে তদন্ত কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রত্যেকেই নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে ওই দিনের চুল কেটে দেয়ার মর্মান্তিক বর্ণনা দেন। এ বর্ণনা দিতে গিয়ে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র একেএম নাজমুল হোসাইন এসব তথ্য জানিয়ে নিতি বলেন, রাত সাড়ে ৬টা পর্যন্তও অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন এ ঘটনায় তার বক্তব্য পেশ করতে আসেননি। তিনি শেষ পর্যন্ত আসবেন কি না তা বলতে পারছি না।

পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবি করায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেন রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন। এ ঘটনায় নাজমুল হাসান তুহিন নামের এক ছাত্র ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা টানা ৩ দিন ওই শিক্ষিকার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন ও অনশনের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এ ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের  একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটি এ ঘটনার সময়ের সিসি ভিডিও ফুটেজসহ অন্যান্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

এরপর এদিন নির্যাতিত ছাত্রসহ মোট ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আশ্বাসে শনিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে আন্দোলন শিথিল করে। এছাড়া রোববার সকাল থেকে দিনভর তারা একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। তারা শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বরখাস্ত না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থান থেকে পিছু হটবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছে।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অপর দুই মুখপাত্র আবু জাফর ও শামীম হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষীরা সবাই শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন নিজ হাতে কাচি দিয়ে ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কেটে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এরপরেও যদি তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী বরখাস্ত করা না হয়, তবে আমরা আবারও কঠোর আন্দোলন শুরু করব।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রক্টর লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, এখনও তদন্তের কাজ শেষ হয়নি। তদন্ত চলছেই। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে রবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ বলেন, তদন্ত চলছে। এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সূত্র: যুগান্তর