শিরোনাম
করোনা মহামারির মধ্যে দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধের পর এ মাসে খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্তত ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ জন্য শিক্ষার্থীদের টিকাদানের গতিও বেড়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকা কিছু শিক্ষার্থীর টিকা নিবন্ধনের জটিলতা এখনো কাটেনি। সূত্র: প্রথম আলো
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। পরদিন থেকে মেডিকেল কলেজগুলোতেও ক্লাস শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে মোট ৫১টি। এর মধ্যে ৪টিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। বাকিগুলোর মধ্যে ৩৯টিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী পড়ানো হয় (ইন-ক্যাম্পাস)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৩ লাখ। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। আর পাঁচটি আছে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
গতকাল শনিবার ২৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইন-ক্যাম্পাস) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসে খুলছে। বেশির ভাগই দিন-তারিখ ঠিক করেছে। কেউ কেউ সভা ডেকেছে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েটসহ চারটিতে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবাই শিক্ষার্থীদের করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া সাপেক্ষে আবাসিক হলে ওঠার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
কোন বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলছে
স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলছে আগামী মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর)। এর পরপর এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এরই মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ২০ অক্টোবর। তার আগে আবাসিক হলগুলো খোলা হবে এবং ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চালু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার গতকাল জানিয়েছেন, গত মাস পর্যন্ত তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়া হয়েছে। এরপর আরও অনেক শিক্ষার্থী টিকা দিয়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলগুলো খুলবে ১৭ অক্টোবর এবং ২০ অক্টোবর সশরীর ক্লাস শুরু হবে। ২১ অক্টোবর খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তার আগে ১১ অক্টোবর হল খুলবে।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের হল খুলবে ২৫ অক্টোবর। এরপর থেকে বিভাগগুলো তাদের বিভাগীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সশরীর ক্লাস নিতে পারবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ অক্টোবর স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়া হবে। এরপর ২৬ অক্টোবর থেকে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলবে ৪ অক্টোবর এবং সশরীর ক্লাস শুরু হবে ২১ অক্টোবর।
গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল সিন্ডিকেট সভায় বসেছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ অক্টোবর থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের সব শিক্ষার্থী, স্নাতকের কয়েকটি অনুষদের চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে এবং ১৮ অক্টোবর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
এ ছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস শুরু হবে ২৫ অক্টোবর এবং ২১ অক্টোবর হল খুলবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ৭ অক্টোবর খুলবে এবং সশরীর ক্লাস শুরু হবে ১৭ অক্টোবর। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে ৪ অক্টোবর। গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (চতুর্থ বর্ষ) এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে ৭ অক্টোবর। আর অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে ২০ অক্টোবর।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সেলিম হোসেন বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সশরীর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এখন একাডেমি কাউন্সিলের সভায় ২৮ অক্টোবর থেকে আবাসিক হল খোলার সুপারিশ করা হয়েছে। এ মাসেই খুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর সশরীর প্রতিটি বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হবে।
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দুর্গাপূজার ছুটির পর খুলবে বলে আশা করেছেন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ৫ অক্টোবর এটি ঠিক হবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসে খুলবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবু তাহের জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করছেন দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ১৯ অক্টোবরের পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস শুরু করতে পারবেন। ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স, পিএইচডি ইত্যাদি কোর্স) পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ অক্টোবর হল খোলা হবে। আর সশরীর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে ৭ অক্টোবর। অন্যান্য শিক্ষার্থীর জন্য ১০ অক্টোবর হল খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সশরীর ক্লাস শুরু হবে ১৮ অক্টোবর।
নেত্রকোনায় অবস্থিত শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা আশা করছেন, দুর্গাপূজার ছুটির আগে হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। ছুটির পর সশরীর ক্লাস শুরু হবে।
কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে, সেটি আগামীকাল সোমবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ঠিক হবে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দুর্গাপূজার ছুটির পর খোলার প্রস্তুতি চলছে।
এরই মধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল খুলে দিয়ে সশরীর পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে। রাজধানীতে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে গত শুক্রবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, আজ রোববার ক্লাসের সময় ঠিক হবে। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪ হাজার ৭০০। কিছুদিন আগপর্যন্ত আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ হাজারের বেশি প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন।
জামালপুরে অবস্থিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২০ সেপ্টেম্বর সশরীর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
চার বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ৩০ অক্টোবরের আগে সশরীর ক্লাসের সম্ভাবনা কম। বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, ১২ অক্টোবর তাঁদের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
টাঙ্গাইলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে সশরীর ক্লাস শুরু হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে পরীক্ষাগুলো হবে। এরপর সশরীর ক্লাসের সিদ্ধান্ত হবে।
এনআইডি না থাকা শিক্ষার্থীদের টিকা নিয়ে সমস্যা
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেসব শিক্ষার্থীর এনআইডি নেই, তাঁদের জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে টিকার নিবন্ধন করা যাবে। এ জন্য ইউজিসি একটি ওয়েবলিংকও চালু করেছিল। এর মাধ্যমে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক নিবন্ধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটি খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে এনআইডি না থাকা শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে ইউজিসি।
ইউজিসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেন, ‘ইন-ক্যাম্পাস’ শিক্ষার্থী আছে এমন ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। তাতে দেখা যায়, ১৫ হাজার ৫৫৮ জন শিক্ষার্থীর এনআইডি নেই। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি; ৩ হাজার ৩৫৭ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৫৩৮ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৪৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। বাকিরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ইউজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, এনআইডি না থাকা শিক্ষার্থীদের তালিকা তাঁরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু জন্মসনদ নিবন্ধনের কাজটি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ জন্য কারিগরি কাজের জন্য সামান্য সময় লাগছে।
অবশ্য এনআইডি ছাড়া নিবন্ধনের বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক মিজানুর রহমান।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় টিকাদান চলবে। কিন্তু সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানা বেশি জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলোর একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, নিয়ম না মেনে হলে উঠলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়বে।