শিরোনাম
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছিল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু প্রথম বছরই হতাশ করেছে এ পদ্ধতি। শিক্ষার্থীদের অর্থব্যয় এবং একাধিক ক্যাম্পাসে ছোটাছুটি আছে আগের মতোই। বিপরীত দিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাচ্ছে না শিক্ষার্থী। ফলে শুরুর আগেই কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ে যাচ্ছে।
ভর্তিচ্ছুরা জানান, এই পদ্ধতিতে প্রথমে ফি দিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এরপর প্রাপ্য ফল নিয়ে আবার আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোথাও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ অনুযায়ী একাধিক আবেদন করতে হয়েছে। আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নিশ্চিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছে। এই আবেদন করার জন্য তাদের যেতে হচ্ছে সশরীরে। এতে আবেদন ফির অতিরিক্ত যাতায়াত এবং অন্যান্য খরচও হচ্ছে। এভাবেই অর্থব্যয় ও ভোগান্তির বেড়াজালে পড়েছে তারা।
অবশ্য প্রথমবার হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন গুচ্ছ ভর্তিসংশ্লিষ্টরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, প্রথমবারের মতো এবারে এ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
যে কারণে অনেক কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। সামনের পরীক্ষা আরও গঠনমূলক হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, খরচ ও ভোগান্তি আগের চেয়ে কমেনি-এমনটি বলা ঠিক হবে না। এক সময়ে ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীর ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হতো। এখন ৩-৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন জমা দিতে গেলেও তার চেয়ে নিশ্চয়ই অনেক কম খরচ হয়। তাছাড়া বারবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। এটা সবচেয়ে বড় সুবিধা।
দেশে বর্তমানে অনুমোদিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫১টি। এরমধ্যে গতবছর ৩৯টিতে প্রথমবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বাকিগুলোর মধ্যে কোনোটিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি করা হয়। আবার কোনোটি চালু হয়নি। এমন নতুন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এবার চাঁদপুর এবং নেত্রকোনায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতে পারে। এবারে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পাশ করেছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার শিক্ষার্থী। তবে জিপিএ-৩.৫ পর্যন্ত ভালো ও মধ্যম মানের ফলধারী হিসাবে চিহ্নিত শিক্ষার্থী ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৮২০ জন।
সাধারণত এসব শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভিড় জমায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকা আসন আছে মাত্র ৯০ হাজার। অর্থাৎ, প্রতি আসনের বিপরীতে এবার গড়ে ১১ শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এমবিবিএসে ভর্তির আবেদন নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
উল্লিখিত ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্য ৩০টি নিয়ে গত বছর ৩টি গুচ্ছ করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হয়েছিল জিএসটি গ্রুপ। ৩ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট) এবং কৃষি ও কৃষিপ্রধান ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুটি গ্রুপ ছিল। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও বুয়েট আলাদা পরীক্ষা নেয়। এই তালিকায় আরও ছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসহ এ ধরনের বিশেষভাবে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমানোর পরিবর্তে আগের মতোই ছোটাছুটি বিষয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির। ওই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য উল্লেখ করেন, ভোগান্তি ও অর্থব্যয় আগের চেয়ে কমেছে। দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তিনি এর বিপক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘আসলে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে ইউজিসিসহ তাদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং বলছি।’
জানা গেছে, এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে ৩৯ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বিষয় উল্লেখ করে চিঠি দেওয়া হয়। তাতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখা এবং এইচএসসিতে নেওয়া সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সংস্থাটি আগামী মাসের মাঝামাঝি এ পরীক্ষা নিয়ে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের চিন্তাও করছে।
এসব বিষয় নিশ্চিত করে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রথমবার আয়োজন করার ফলে বেশকিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন সেসব বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কীভাবে ভোগান্তিমুক্ত ও সুন্দর করা যায় সেই চেষ্টাই থাকবে। তিনি বলেন, আরও যে দুটি গুচ্ছ আছে সেগুলোতে সমস্যা নেই। জিএসটির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকম হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে-এখানে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগ বা বিষয় পছন্দের বৈচিত্র্য। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারে এসব সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে ইতোমধ্যে প্রযুক্তিবিদরা জানিয়েছেন। তা নিয়ে আলোচনা করতে মধ্য মার্চে ইউজিসির উদ্যোগে একটি বৈঠক হওয়ার কথা আছে। এই সময়ের মধ্যে এবারের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার এখনও ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়নি। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি আছে। বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সেখানে প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের দিক থেকে বড় সমস্যা ছিল বারবার আবেদনে টাকা খরচ করতে হয়েছে। যাতায়াতের খরচ তো আছেই। অন্যদিকে এবার এখন পর্যন্ত শুধু বুয়েট, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজগুলো ভর্তি শেষে ক্লাস শুরু করতে পেরেছে। বিশেষ করে গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ক্লাস শুরু হয়নি। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার মতোই বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগ বণ্টন করে দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর বিলম্ব দূর হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বারবার আবেদন ও দৌড়াদৌড়ি বন্ধ হবে।
অধ্যাপক আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল পেতে একই পয়েন্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আর বিভাগ বণ্টন করে দেওয়ার বিকল্প নেই। যদি আবেদনের সময়ে বা ভর্তি পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পছন্দ নেওয়া হয় তাহলে সহজ হয়ে যায়। এমন করা যায় কিনা তা আলোচনায় উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসি বসবে। তিনি আরও বলেন, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছতে এলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যেত। ভারতে এ ধরনের পদ্ধতি কার্যকর আছে।
সূত্র: যুগান্তর