শিরোনাম
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘গতবার আম্পানে ধান নষ্ট হয়েছে। ভালো সংগ্রহ হয়নি। সর্বনিম্ন মজুত ছিল চার লাখ মেট্রিক টন। সেই সময়ও চালের দাম বাড়তে দিইনি। এবার বোরোতে যেমন বাম্পার ফলন হয়েছে, আমনেও বাম্পার ফলন। জাতীয় মজুত সর্বকালের সেরা, ২০ লাখ ১ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন। তখন চালের দাম বাড়ছে। এটা হাস্যকর। এখন চালের দাম বাড়াটা ভালো ঠেকছে না। হয়তোবা এই তিন বছর পরে আপনাদের কাছে আমার নতুন করে শিক্ষা নিতে হবে। আমার এই তিন বছর বরবাদ গেল। আমার সারা জীবনের রাজনীতিই বরবাদ গেল।’
আজ সোমবার বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘অবৈধ মজুতদারি রোধে করণীয় ও বাজার তদারকি–সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন আসনের সাংসদ, জেলা প্রশাসক, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
সভায় কয়েকজন চালকল মালিক তাঁদের বক্তব্যে বলেন, সরু চাল বছরে একবারই হয়। অভিজাত শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য এ চাল তাঁরা একটু করে রেখে দেন। আর একশ্রেণির অবৈধ মজুতদার রয়েছেন, যাঁদের ব্যবসা করার মতো একটা ট্যাক্স ফাইলও নেই। তাঁরা করোনার সময়ে অলস পড়ে থাকা টাকা দিয়ে ধান কিনে মজুত করেছেন। এতে মিল মালিকদের কোনো মুনাফা হচ্ছে না। তাঁরা মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়াচ্ছেন না।
চালকল মালিকদের কথার সূত্র ধরেই মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই বলেছেন, উৎপাদন প্রচুর হয়েছে। ঘাটতি নেই। মজুত আছে। আমাদের কাছে নেই, অন্য জায়গায় আছে। তাহলে আপনারা জানেন, কার কাছে ধান আছে। আমরা মন্ত্রণালয়ও এ ধান কিনি না। জেলা প্রশাসকও ধান কেনেন না। ডিআইজি সাহেবরাও ধান কেনেন না, আমাদের জেলা খাদ্য কর্মকর্তারা ধান কেনেন না। আপনারাই কেনেন। আপনারাই ভাঙান। আপনারাই বলছেন, অবৈধ মজুত আছে। আপনারাই সেখান থেকে কিনছেন। আপনারাই জানেন, কার কাছে মজুত আছে। দয়া করে তথ্যটা আমাদের দিন। সহযোগিতা করেন।’
আড়াই মাসের জন্য সরু চালের মজুত রাখার প্রসঙ্গ টেনে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সরু চালের মজুত শেষ হয়ে গেলে অভিজাত ক্রেতারা প্রয়োজনে মোটা চাল খাবেন। তাঁদের আড়াই মাস চালানোর দায়িত্ব তো কেউ আপনাদের দেয়নি। সেই দায়িত্ব সরকারের। ১৮ কোটি মানুষকে কীভাবে খাওয়াবে, সেই দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। আপনারা কিনবেন, ভাঙাবেন, বিক্রি করবেন। আপনারা সব বিক্রি করে দেন। তারপর যদি ঘাটতি হয়, আমরা আমদানির রাস্তা পাব। সেই রাস্তাও আপনারা খোলাসা করছেন না। আপনারা ধীরে ধীরে রক্তচোষার মতো করে চুষবেন, তা তো হতে পারে না। আপনারা আজ যে ধান কিনবেন, পরশু দিন সেটা চাল করে বিক্রি করবেন। কিন্তু আগের কেনা ধান এখন চাল করে বেশি দামে বিক্রি করবেন, সেটা হতে পারে না।’
সরকার নির্ধারিত দামে চালকল মালিকেরা খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যে যৌক্তিকভাবে চালের দাম ৪০ টাকা কেজি বেঁধে দিয়েছে। সেই দামে আপনারা চাল সরবরাহ করছেন। যদি ধানের দাম বাজারে বেশি থাকত, আপনারা এ দামে কখনোই অতিরিক্ত বরাদ্দ চাইতেন না। আপনারা ৩০০ টন বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। তা দুই–তিনবার দিয়েছেন। আবার অধিভুক্ত চাল সরবরাহ করার জন্য বরাদ্দ চাচ্ছেন। আমি যৌক্তিকভাবেই যদি বলি, ধানের দাম বাড়েনি। আপনাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে। তাহলে চালের দাম বাড়ছে কেন?’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমদানি করার আগেই আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। আদৌ কি আমাদের দেশে চাল আমদানির প্রয়োজন আছে? যদি আনতে হয় তো আনব। এতে আমার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন কি না, আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হন কি না, এটাই মতবিনিময় সভার আসল উদ্দেশ্য। আপনাদের আমি অনুরোধ করব, কোথায় কোথায় ধান মজুত আছে, সেই তথ্যগুলো আমার জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে দিন। সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে, কার কাছে ধান মজুত আছে। দয়া করে তথ্যটা দিন। আমরা কিন্তু আপনাদের চালকলে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করিনি। চাল জব্দ করিনি। ব্যবসা করছেন, লাভ হচ্ছে কি লোকসান হচ্ছে, সেটা আপনারাই বুঝবেন। আমি এগুলো বুঝতে চাই না। আমি পত্রপত্রিকায় সপ্তাহে দুই–তিনবার করে চালের দাম বাড়তি দেখতে দেখতে অস্থির হয়ে যাচ্ছি। আপনারা দয়া করে আমাদের সহযোগিতা করেন।’
জেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বিনা লাইসেন্সে যেন কেউ ধান–চালের ব্যবসা করতে না পারেন।’
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন, খাদ্য সচিব মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আবদুল বাতেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জি এম ফারুক পাটোয়ারী, বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুজ্জামান ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি অনিল কুমার সরকার বক্তব্য দেন।
সূত্র: প্রথম আলো