আসিয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

ফানাম নিউজ
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:০৪

বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও ভূ-রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আসিয়ানের সেকটোরাল ডায়ালগ অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য বৃদ্ধি ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ওই জোটের আরও সম্পৃক্ততা চায় বাংলাদেশ।

এবিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস বলেন, প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ১৯৭২ এর জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া বাংলোদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এর একমাস পরে স্বীকৃতি দেয় ইন্দোনেশিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে সবাই বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পরপরই স্বীকৃতি দিয়েছিল। এ বছর ওইসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি বিশেষভাবে উদযাপন করার চেষ্টা করছি আমরা।

জানা গেছে, চলতি মাসেই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সিঙ্গাপুর এবং প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মালয়েশিয়া যাবেন। এছাড়াও মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক সংলাপের জন্য থাইল্যান্ড যাবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ ধরনের সংলাপ গত প্রায় আট বছরে আর হয়নি।

মাশফি বিনতে সামস বলেন, গত প্রায় এক মাসে আসিয়ানের সাতটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। যেখানে কয়েকটি বিষয় নিয়ে তিনি সবার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এছাড়া দেশভেদে যে বিষয়গুলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে।

কোভিড পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে এ বছর সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে; এমনটাই জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, আসিয়ানের সেকটোরাল ডায়ালগ অংশীদার, বাণিজ্য বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সমস্যা ও যৌথ সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব আয়োজনে আসিয়ানের সবদেশের সহযোগিতা আশা করে বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের বৃহৎ রফতানির গন্তব্যস্থল হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। বাংলাদেশের মোট প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার বাণিজ্যের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ৮০০ কোটি ডলার। এরমধ্যে বাংলাদেশ রফতানি করে ৬১ কোটি ডলার এবং আমদানি করে ৭৩০ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নতুন নতুন রফতানি পণ্য যোগ হচ্ছে তালিকায়। ফলে আসিয়ান বাজারে রফতানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর একটি চেষ্টা সরকারের আছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি আকারে অনেক বড় হয়েছে এবং একই সঙ্গে আসিয়ান আগের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলোদেশ বের হয়ে যাবে। তখন নিরবিচ্ছিন্ন বাণিজ্য অব্যহত রাখার জন্য আসিয়ান দেশগুলোর অনেকের সঙ্গে মুক্ত-বাণিজ্য বা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আসিয়ানের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে বাংলাদেশ, কারণ ওই জোটের সদস্য হচ্ছে মিয়ানমার। এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের আরও গভীর সম্পৃক্ততা চাইছে বাংলাদেশ। ওইসব দেশগুলোর প্রায় প্রতিটি বৈঠকে রোহিঙ্গা একটি এজেন্ডা হিসেবে থাকে।

মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ জাতিগত জটিলতা থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য প্রতিবেশি দেশগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করেছে এবং সবার মিলিত উদ্যোগের জন্য প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছে বাংলাদেশ বলে তিনি জানান। 

তিনি বলেন, আসিয়ানের যে সাতটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেছেন, তারা সবাই সমস্যা সমাধানে তাদের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে আমরা আরও তৎপর হবো।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন