শিরোনাম
স্থানীয় পর্যায়ে কৃষক ও চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রাজধানীবাসীর জন্য খুশির খবর হলো— এখন প্রতি কেজি আলু মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তবে রাজধানীর কোনও কোনও বাজারে এখনও ১৫ টাকা দরেও আলু বিক্রি হচ্ছে। ১৫ মাস আগে, অর্থাৎ ২০২০ সালের অক্টোবরে ক্রেতাদের আলু কিনতে হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে।
জানা গেছে, গত বছর আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবারও চাষিরা বেশি করে আলু চাষে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু এখন আলুর দাম না থাকায় লোকসান গুনছেন তারা। আলু চাষীরা বলছেন, গত বছর যে আলু মাঠেই তারা প্রতি কেজি বিক্রি করেছিলেন ২৫-৩০ টাকায়। এবার সেই আলু একই সময়ে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬ টাকা দরে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। অর্থাৎ দেশব্যাপী কৃষকরা লোকসান দিয়ে সস্তায় অনেকটা পানির দরে আলু বিক্রি করছেন।
রাজধানীর মানিক নগর এলাকার বাসিন্দা তানিয়া সুলতানা বলেছেন, বাজারে সবচেয়ে এখন কম দামের সবজি হলো আলু। শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) তিনি ৩০ টাকায় তিন কেজি আলু কিনেছেন। রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এখন তারা প্রতি কেজি আলু জাতভেদে সর্বনিম্ন ৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। যদিও এবার আলু উৎপাদনে কেজিপ্রতি তাদের ব্যয় হয়েছে গড়ে প্রায় সাড়ে ৭ টাকা করে।
অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে, গত বছরের কিছু আলু মজুত থাকায় এবার দাম কমেছে। পুরনো আলু শেষে হলেই নতুন আলুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে বাজারে গ্র্যানোলা সাদা ও এস্টারিক্স জাতের লাল আলু পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে সাদা আলু ৬ টাকা ও লাল আলু ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের কেজি ২০ টাকা
এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে। কোথাও কোথাযও বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি দরে। যদিও চার মাস আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই হয়েছিল।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত একমাসে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে প্রায় ৪১ শতাংশের মতো। আর আলুর দাম কমেছে ৩৩ শতাংশের মতো।
পেঁয়াজের দাম কমে আসায় মানিক নগর বাজার থেকে ১০০ টাকা দিয়ে ভালো মানের ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন একই এলাকার রাবেয়া সুলতানা। তিনি উল্লেখ করেন, সবচেয়ে ভালো বাছাই করা পেঁয়াজ তিনি নিলেন ২০ টাকা কেজি দরে।
মানিক নগর ওয়াসা রোডে সবজি বিক্রেতা মরিয়ম বেগম জানান, শুক্রবার তিনি ১০ টাকা কেজি আলু বিক্রি করছেন। আর পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ২০ টাকা কেজি দরে। তবে এই বাজারে ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি দরে।
কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম
গত সপ্তাহের তুলনায় রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ১০ টাকা কমে এখন দেড়শ’ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি।
দাম কমার তালিকায় রয়েছে চাল (মাঝারি), খোলা আটা, খোলা ময়দা, ডাল, আদা ও রসুন। অবশ্য দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ও খোলা পামওয়েল।
সবজির দাম চড়া
গত সপ্তাহের তুলনায় রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। পাশাপাশি মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শসা কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পাকা টমেটোর দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। এর সঙ্গে বেড়েছে শিমের দাম। মানভেদে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৬০ টাকা। তবে আগের দামেই ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গাজর। ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। শালগমের (ওল কপি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালং শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দাম বেড়েছে
বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দামও কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে বেশি দাম বেড়েছে ইলিশের। ইলিশের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন