শিরোনাম
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘিরে আজ সোমবার সকাল থেকে কক্সবাজার আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আজ সকাল আটটার দিকে কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড় এলাকায় অবস্থিত আদালতপাড়ায় সরেজমিন দেখা গেছে, আদালত ভবনের মূল ফটকসহ আশপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে তল্লাশিচৌকি। আইনজীবী ছাড়া সাধারণ কোনো মানুষকে আদালতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা করা দরকার, সব করা হয়েছে।
সকাল নয়টার দিকে আদালত আসেন কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রায় ঘোষণা হতে পারে।
এদিকে আসামিদের স্বজনেরাও আদালত প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেছেন। সিনহা হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কনস্টেবল রুবেল শর্মার ছোট ভাই রাহুল শর্মা রায় শোনার অপেক্ষায় আছেন। আদালত প্রাঙ্গণে তিনি বলেন, ‘যারা অপরাধ করেছে, তাদের সাজা হোক। নিরপরাধ কারও সাজা যেন না হয়। আমার ভাই অপরাধ করলে তার সাজা হোক। তবে কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে যেন আমার ভাইয়ের সাজা না হয়।’ শারীরিক প্রতিবন্ধী রাহুল শর্মার দাবি, আসামি রুবেল শর্মা তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।
পুলিশের পাশাপাশি কক্সবাজারে র্যাবের টহল জোরদার রয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। তাঁর সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তাঁর ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যায় মামলা চারটি
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। তিনটি মামলার দুটি মাদক রাখার অভিযোগে এবং একটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে।
এ ঘটনায় হত্যা মামলাটি করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। ওই বছরের ৫ আগস্ট আদালতে করা ওই মামলায় তিনি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের নয় সদস্যকে আসামি করেন।
চারটি মামলারই তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। পরে র্যাব এ ঘটনায় প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের ১১ জন পুলিশ সদস্য ও ৩ জন গ্রামবাসী। পুলিশের করা তিনটি মামলার তদন্তে উত্থাপিত অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে র্যাব। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পূর্বপরিকল্পনায় আসামিরা মেজর (অব.) সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেন।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে আসামি করে কক্সবাজার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় র্যাব। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন । তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের ২৭ জুন প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়।
অভিযোগপত্রে থাকা ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত ১২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
সূত্র: প্রথম আলো