শিরোনাম
‘দেশপ্রেম–দায়িত্ব–শৃঙ্খলা–সুস্থ সংস্কৃতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি’ মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান প্যানেলের নির্বাচনী পোস্টারে দেখা যাচ্ছে এমন স্লোগান। অন্যদিকে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ প্যানেলের পোস্টারে ‘সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা, কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করাই আমাদের অঙ্গীকার’—এমন স্লোগানই শোভা পাচ্ছে। শিল্পী সমিতি তাদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে কাদের বেছে নেবে, তা নির্ধারিত হবে আজ।
ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর, রিয়াজ ফেরদৌস, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, বাপ্পারাজ, জায়েদ খান, নিপুণ, সাইমন, ইমন, পরীমনিদের মতো তারকাদের অংশগ্রহণে চলচ্চিত্র তারকাদের এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহও বেড়েছে। একই সঙ্গে এই নির্বাচন ঘিরে দুই প্যানেলে রয়েছে অস্বস্তি, স্বস্তি এবং একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও আছে শঙ্কায়। এফডিসিতে নির্বাচনের আগের দিন এমনটাই শোনা গেছে।
আজ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের আসরের ভোট গ্রহণ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) শিল্পী সমিতি কার্যালয়ে সকাল নয়টায় শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। ২১ সদস্যের কমিটির এই নির্বাচনে দুটি প্যানেল এবং দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৪৪ জন চলচ্চিত্রশিল্পী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতবারের বিজয়ী সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান এবারও একসঙ্গে প্যানেল দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন প্যানেলে এবার লড়ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ।
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিজ নিজ প্যানেলের জয় নিশ্চিত করতে দুটি প্যানেলের সদস্যরা শক্তভাবে মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়া বাতিল হওয়া ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার হিসাব–নিকাশ, জ্যেষ্ঠ তারকা শিল্পীদের সমর্থন—এসবের কারণে শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি শিবিরে বেশ উত্তেজনা ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি করেছে।
আগামীকালের এই নির্বাচন নিয়ে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাসের দানাও বেঁধেছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলে। পাশাপাশি নির্বাচনের পরিবেশ দেখে ভোটের দিন বিএফডিসির আঙিনা ঘিরে শঙ্কার কথাও ভাবছে খোদ নির্বাচন কমিশন।
এই নির্বাচনের খবর এখন শুধু বিনোদন অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা দেশে ছড়িয়েছে। প্রার্থী ও ভোটারদের প্রচার-প্রচারণার খবর, স্থিরচিত্র আর ভিডিও এখন ফেসবুকে ভাইরাল। নির্বাচনের খবরাখবর গণমাধ্যমেও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিনোদন অঙ্গনের বাইরেও সাধারণ অনেক মানুষের চোখ এখন এই নির্বাচনের দিকে। চলতি মাসের মাঝামাঝি মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিএফডিসির আঙিনায় প্রার্থী, ভোটার, গণমাধ্যমকর্মী ও বহিরাগতের পদচারণে এক ভিন্নমাত্রার পরিবেশ তৈরি করেছে। বিগত কমিটির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হওয়া, না হওয়া এবং ভবিষ্যতে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজের নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি, পাল্টা প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্যানেলের মধ্যে একধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে চলচ্চিত্রের সব মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অনেকেরই ধারণা, এবারের নির্বাচন খুব সহজ, শান্তি পূর্ণ হবে—এটা বলা খুবই মুশকিল।
এদিকে উভয় প্যানেলই ভোটের মাঠে সুবিধা নিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। এসব কারণেই উভয় প্যানেলে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। তবে বুধবার উচ্চ আদালতের একটি রায়ে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের ভোটের হিসাব পাল্টে গেছে।
মিশা-জায়েদ কমিটির মেয়াদে বাতিল হওয়া ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। অনেকই ধারণা করছিলেন, এই শিল্পীরা ভোটাধিকার ফিরে পেলে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল বাড়তি সুবিধা পেয়ে ভোটের মাঠে এগিয়ে যাবেন। আদালতের রায়ে ১০৩ জন শিল্পী ভোটাধিকার ফিরে পেলেও ২৮ জানুয়ারি তাঁরা ভোট দিতে পারছেন না। এমন খবরে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সদস্যরা মোটেও চিন্তিত নয়। তাঁদের মতে, চলচ্চিত্রের সাধারণ শিল্পীরা এরই মধ্যে বুঝে গেছেন, আমরা শিল্পীদের অধিকার আদায়ে মাঠে আছি। এটা আমাদের জন্য ভীষণ ইতিবাচক। আবার ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলকে আলমগীর, শাকিব খানদের মতো বেশ কজন তারকা শিল্পীর সমর্থনে কিছুটা অস্বস্তিতে আছে মিশা-জায়েদ প্যানেল।
ভোটের দিন খুব একটা ভালো পরিবেশ দেখছেন না ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ। তিনি বলেন, ‘ভোটের যে পরিবেশ, তাতে ভোটের দিন ভোট বুথে ব্যালট পেপার নিয়ে আমি টেনশনে আছি। যাঁরা ওই জায়গাটা পরিচালনা করছেন, তাঁরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল। জানি না কাল কী হবে।’ নির্বাচনে বাড়তি চাপ অনুভব করছেন কি না—এ ব্যাপারে এই প্রার্থী বলেন, ‘চাপের ব্যাপারে বলব না, এতটুকুই বলি, এখন পর্যন্ত যা দেখছি, আমার প্যানেল ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না আমি।’
নিপুণের অভিযোগের ব্যাপারে একমত নন প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জায়েদ খান। তিনি বলেন, ‘সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই নির্বাচন কমিশন গঠন করে। তবে এখানে নিরপেক্ষ থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এখানে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, সবাই অভিজ্ঞ। একজন সদস্যের ব্যাপারে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে অভিযোগ দিয়েছিল, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত হলেও জয়ের মালা কারা পরবে, তা ভোটারদের ওপর ছেড়ে দিলেন জায়েদ খান। বললেন, ‘করোনাকালে গত দুই বছর শিল্পীদের জন্য কাজ করেছি। শিল্পীরা বিবেকবান। আমার বিশ্বাস, ভোটাররা আমাকে হতাশ করবেন না। ঠিকঠাক ভোট পেলে আমরা পুরো প্যানেল জিতে যাব।’
তবে নির্বাচনে বিএফডিসিতে শত শত বহিরাগতের আগমন ঘিরে ভীতসন্ত্রস্ত এই প্রার্থী। বলেন, ‘ভোটের দিনও যদি বহিরাগতের এমন দাপট থাকে, প্রবেশ না ঠেকানো যায়, তাহলে তারকা শিল্পীরা তো ভোট দিতেই আসতে পারবেন না। বিষয়টি নিয়ে ভয়ের মধ্যে আছি।’
নির্বাচন বুথের বাইরে ভোটের দিন বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সদস্য জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, ভেতরে সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে। কিন্তু প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে এবারের নির্বাচনের যে পরিবেশ দেখছি, বাইরে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। বিষয়টি ভাবাচ্ছে। কারণ, বিএফডিসির আঙিনায় জায়গা কম। এত মানুষের সমাগম হবে, বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। একটা ছোট্ট ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে গ্যাঞ্জাম লেগে যেতে পারে। তারপরেও ভালো নির্বাচনের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
২০২২-২০২৩ মেয়াদি এই নির্বাচনে মোট ভোটার ৪২৮ জন।
সূত্র: প্রথম আলো