হত্যার পর সারারাত শিমুর মরদেহের সঙ্গেই থাকেন নোবেল, পরদিন করেন জিডি

ফানাম নিউজ
  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৩৬

মরদেহ উদ্ধারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিমুকে (৩৫) হত্যার দায় শিকার করেছেন তার স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল। 

এদিকে পুলিশের জেরায় চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ।

নোবেলের জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার রাতে গ্রিন রোডের বাসায় শ্বাসরোধে হত্যার পরদিন বাল্যবন্ধু ফরহাদকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে গিয়ে মরদেহ ফেলে দিয়ে আসেন নোবেল। ফিরে এসে কলাবাগান থানায় স্ত্রী নিখোঁজের ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার শাহাবুদ্দিন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্ত্রীকে হত্যার পর সারারাত মরদেহের সঙ্গেই থাকেন নোবেল। পরদিন সকালে বন্ধু ফরহাদকে বাসায় ডাকেন। সকালে তারা ভবনের নিরাপত্তাকর্মীকে নাস্তা আনতে বাইরে পাঠিয়ে একটি বস্তায় করে মরদেহটি গাড়িতে রাখেন। এরপর মরদেহ ফেলার জায়গা খুঁজতে তারা সাভার, আশুলিয়া ও মিরপুর বেড়িবাঁধের দিকে যান। কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে না পেরে বিকেলে আবার মরদেহ নিয়ে বাসায় ফেরেন। তারা রাত অবধি অপেক্ষা করে আবার লাশ নিয়ে গাড়িতে করে বেরিয়ে পড়েন এবং কেরানীগঞ্জের  আলিয়াপুর মরদেহ ফেলে আসেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা যোগ করেন,‘রোববার রাতে মরদেহ ফেলার পর নোবেল কলাবাগান থানায় গিয়ে একটি জিডি করেন। জিডিতে বলা হয়, তার স্ত্রী রোববার সকাল থেকে নিখোঁজ।’

শনিবার রাতেই শিমুর সঙ্গে শেষ কথা হয় এবং এর পর থেকে তার বোনকে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানিয়েছেন শিমুর বড় ভাই শহিদুল ইসলাম খোকন।

এদিকে শিমুকে যে এভাবে মেরে ফেলা হবে ভাবতেই পারছেন না তার ছোটবোন ফাতিমা নিশা।

শিমুর মরদেহ উদ্ধার হওয়ার আগের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ফাতিমা বলেন,‘রোববার সন্ধ্যায় আমার কাছে একটি ফোন আসে যে, আমার বোন রাইমা ইসলাম শিমুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তখন থেকেই শিমুর ফোন নাম্বারে বারবার কল দিই। নাম্বার বন্ধ পাচ্ছিলাম। পরে আমি আমার বোনের মেয়েকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি—  তোমার আম্মু কোথায়? সে আমাকে বলে, মা সকালে একা বের হয়েছে এখনও বাসায় ফেরেননি। তার পর আমি আমার বোনের স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ভাইকে ফোন দিই। তাকে ফোন দিয়ে বলি, ভাইয়া আপু কোথায়? তার ফোন তো বন্ধ পাচ্ছি। তখন তিনি আমাকে বলেন, আমি তো বিষয়টি জানি না। সারাদিনে আমি তাকে ফোন দিইনি। তার নাম্বার যে বন্ধ সেটিও আমি জানি না।’ 

পর দিনই (সোমবার) শিমুর লাশ উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পারেন ফাতিমা।  

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী শিমুকে খুন করেন নোবেল। 

এ তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।  তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শিমু হত্যায় এ দুজনের সংশ্লিষ্টতার পাওয়া গেছে।  বিভিন্ন পারিবারিক বিষয় কেন্দ্র করে স্বামী নোবেলে সঙ্গে শিমুর দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। সেই কলহের জেরে গত রোববার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে যে কোনো সময় শিমুকে হত্যা করা হয়। 

এসপি আরও জানান, যে গাড়ি ব্যবহার করে শিমুর লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছে সে গাড়ি জব্দ করে থানায় নিয়েছে পুলিশ। অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন অভিনেত্রী শিমু।  রোববার শুটিংয়ের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। স্ত্রীর নিখোঁজের বিষয়টি সোমবার কলাবাগান থানায় জিডি করেন শিমুর স্বামী নোবেল।

এর মধ্যে সোমবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে রাতে গিয়ে ওই লাশ শিমুর বলে শনাক্ত করেন তার বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন।