শিরোনাম
শুক্রবারের সূর্যটি পশ্চিমাকাশে ডুবার সঙ্গে বিদায় হবে ঘটনাবহুল ২০২১ সাল। সকালে শুরু হবে নতুন বছরের সূর্যোদয়। সূর্য ডুবার এ রাতেই পৃথিবীর হালখাতা থেকে স্মৃতি হয়ে যাবে ২০২১ সাল নামের আরও একটি বছর। পথচলা শুরু হবে ২০২২ সালের। বিদায় বেদনার মাঝেও ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে পালন করা হয় থার্টি ফাস্ট নাইট।
করোনা মহামারি ও রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে বেশ কয়েক বছরের মতো এবারো থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না কক্সবাজার সৈকতে। কিন্তু নিয়মরক্ষায় তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বিচ রিসোর্ট, কক্স-টু-ডে এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রাম আয়োজন করছে। হোটেলের অতিথি, বিদেশি পর্যটক এবং বিশেষ মেহমান ছাড়া এসব অনুষ্ঠানে অন্যদের শরীক হবার সুযোগ নেই।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে কোনো আতশবাজি, পটকা ফুটানো বা উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান করা যাবে না। পাশাপাশি রাত ১২টার পর উচ্চস্বরে মাইক কিংবা সাউন্ডবক্স বাজানোও নিষেধ। থার্টি ফাস্ট নাইট ও বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে জেলা পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা শুরু হয়ে অব্যাহত থাকবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকারণ্য হয়ে উঠে। গত দেড় দশক এমন চিত্রই দিয়েছে বালিয়াড়ি। এবারও থার্টি ফাস্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয় মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটক সমাগম হবে। তবে কোনো আয়োজন না থাকায় এবারো থার্টি ফাস্ট নাইট বা নতুন বর্ষবরণকে ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘একদিকে সাপ্তাহিক ছুটি, অন্যদিকে থার্টি ফাস্ট নাইট। নতুন বর্ষ বরণে অতীতের মতো কক্সবাজারের পর্যটকে ভরে উঠেছে। যদিও গত কয়েকদিনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পর্যটন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পেয়েছে পর্যটকরা। এরপরও গ্রুপ ও পরিবার নিয়ে এসেছে অনেক পর্যটক। শুক্রবারও অনেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ট্যুর অপারেটর সমিতির সদস্য ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, ‘বিজয় দিবস হতে চলমান সময়ে কক্সবাজারে কমবেশি পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। থার্টি ফাস্ট নাইট শুক্রবার আর শনিবারও সাপ্তাহিক ছুটি। এসময় পর্যটকে ভরপুর থাকবে কক্সবাজার। সমান তালে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, ইনানী, হিমছড়িসহ পুরো জেলার পর্যটন স্পটে পর্যটক উপস্থিতি থাকবে।’
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ‘পর্যটন বিকাশে আমরা শুরু থেকেই বাংলা নববর্ষ, থার্টি ফাস্ট নাইটসহ নানা দিবসকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করে তুলি। পর্যটক চাহিদার কারণে এবারো বলরুমে ইনহাউজ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। ব্যুফে ডিনারের সঙ্গে ছাদে থাকছে স্টেজ প্রোগ্রাম।’
সায়মন বিচ রিসোর্টের হিসাব ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান নূর জানান, বিদেশী ও ইনহাউজ অতিথিদের জন্য ব্যুফে খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অন্যসময় বাইরের অতিথি ব্যুফে খেতে আসতে পারলেও থার্টি ফাস্ট নাইটের অনুষ্ঠান বাইরের অতিথির প্রবেশ বন্ধ থাকবে।’
তারকা হোটেল কক্সবাজার সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) নাভিদ আহসান চৌধুরী বলেন, ‘থার্টি ফাস্ট নাইটে দু’রাত তিনদিনের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি আমরা। বৃহস্পতি ও শুক্রবার হোটেলে অবস্থানরতদের জন্য একেএসের ডিজে এবং মাইলসের শাফিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপেও থার্টি ফাস্ট নাইটের কোনো অনুষ্ঠান নেই। তবে কয়েক হাজার পর্যটক নতুন বছরকে বরণে দ্বীপে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘নানা কারণে সরকার এবারও ‘থার্টি ফাস্ট নাইটে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে গভীর রাত পর্যন্ত বিচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। কিন্তু রাত দশটার পর হোটেলের সব বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, কোনো হোটেল-মোটেল ইনডোর প্রোগ্রামের জন্য জেলা প্রশাসনে অনুমতি নেয়নি। এরপরও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রাম করলে নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। কোথাও থেকে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার অভিযোগ এলে হোটেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ