শিরোনাম
লকডাউনে অনেক কিছু স্থবির থাকলেও তারকার পদচারণায় আদালত পাড়া ছিল সরগরম। ক্রিকেটার নাসির, পরীমণি, রাজ, মৌ, পিয়াসা, জেমস; এদের বাইরেও ছিলেন হেফাজতে ইসলামের তারকা ব্ক্তা মামুনুল হক ও আরও অনেকে।
পরীমণি, নাসির ও অমি ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও তার দুই সহযোগীকে মাদকসহ আটক করে র্যাব। আটকের পর তাদের নেওয়া হয় র্যাব সদর দফতরে। পরে র্যাব-১ বাদী হয়ে বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরীমণির একাধিকবার রিমান্ডের ঘটনাও ছিল আলোচনায়। এরপর ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ মুচলেকার বিনিময়ে পরীমণির জামিন মঞ্জুর করেন।
৪ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক কাজী মোস্তফা কামাল পরীমণিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তাতে বলা হয়েছে, পরীমণির বাসা থেকে জব্দ করা মাদকদ্রব্যের বৈধতা ছিল না। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সিআইডিকে জানানো হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরীমনির নামে মদজাতীয় পানীয় সেবনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ৩০ জুন ওই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়।
মামলাটি আগামী ২ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ- ১০ এর বিচারক নজরুল ইসলামের আদালতে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
১৩ জুন রাতে চিত্রনায়িকা পরীমণি তার ফেসবুক পোস্টে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন। মুহূর্তের পোস্টটি ভাইরাল হয়। এরপরেই পরীমণি সাংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও হুমকি দেয় ব্যবসায়ী ও উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ আরও বেশ কিছু লোকজন।’
পরদিন নাসির ও অমিসহ পাঁচ জনকে উত্তরার একটি বাসা থেকে মাদকসহ গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।
পরীমণির করা এ মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। পরে দুটি মামলায় রিমান্ড শেষে জামিন পান নাসির ও অমি। ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার মামলাটি বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৯ বিচারাধীন। মাদক মামলাটিও বিচারাধীন।
নাসির-তামিমা
‘অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া’, ‘ব্যাভিচার’ ও ‘মানহানি’র অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমার সাবেক স্বামী মো. রাকিব হাসান আদালতে মামলা করেন। পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা শেষে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
৩০ সেপ্টেম্বর নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তে নাসির, তামিমা ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে দোষী উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে তাদের বিয়ে বৈধ উপায়ে হয়নি বলে উল্লেখ করেছে পিবিআই। তামিমা ও রাকিব হাসানের বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত নথিও জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে মোহাম্মদ জসীমের আদালতে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়। ৩১ অক্টোবর আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আগামী ২৪ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে মামলাটির।
মাদক ও পর্নোগ্রাফি চক্রে রাজ
প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ও তার সহযোগী সবুজ মিয়াকে বনানীর বাসা থেকে মাদক ও সিসা সেবনের সরঞ্জামসহ ৪ আগস্ট আটক করে র্যাব। তাদের বাসা থেকে পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মাদক ও পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। একাধিকবার তাদের রিমান্ডে পাঠান আদালত।
২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে বিনিয়োগ করা শুরু করেন রাজ। ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসময় বিভিন্ন ক্লাবে গিয়ে মাদকসেবন ও মাদক বেচাকেনা করতেন তিনি।
বাংলালিংকের বিরুদ্ধে জেমসের মামলা
সংগীত শিল্পী জেমসের কিছু জনপ্রিয় গান অনুমতি ছাড়া বাংলালিংক তাদের ওয়েলকাম টিউন, বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করায় কপিরাইট আইনে বাংলালিংকের সিইও এরিক অসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নগর বাউল জেমস।
অপর আসামিরা হলেন, চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার এম নূরুল আলম, চিফ করপোরেট রেগুলেটরি অফিসার তৈমুর রহমান ও হেড অফ ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস অনিক ধর। ৩০ নভেম্বর এ চারজনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন আদালত।
১০ নভেম্বর একই আদালতে তাদের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনে দুটি মামলা করেন শিল্পী শাফিন আহমেদও।
মামুনুল হক
১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মারধর, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাতে গুরুতর জখম, চুরি, হুমকি মামলায় ১৯ এপ্রিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২০১৩ সালের হেফাজতের সহিংসতা ঘটনায় একাধিক মামলাসহ নারায়ণগঞ্জের কথিত স্ত্রী ঝর্ণাকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এসব মামলায় মামুনুলকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
মৌ-পিয়াসা
১ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন মৌ আক্তার। পর দিন মোহাম্মদপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় ‘মডেল’ মৌকে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হয়।
১ আগস্ট রাতেই গুলশান থানার বারিধারায় ‘মডেল’ ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। অভিযানে চার প্যাকেট ইয়াবা জব্দ করে ডিবি। এ ছাড়াও পিয়াসার রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে ৯ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। এরপর গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় পিয়াসাকেও একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হয়।
সূত্র: জাগো নিউজ