শিরোনাম
মাঝনদীতে হঠাৎ লঞ্চে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমশ দোতলায় কেবিনের দিক এগিয়ে আসছে। লঞ্চ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে নদীতে পড়ছে যাত্রীরা। অন্যদিকে যাত্রীদের কান্না ও চিৎকারে যাত্রীরা ছোটাছুটি করছে। সূত্র: আরটিভি
বৃহস্পতিবার রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চের আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া এক আইনজীবী দম্পতি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এসব কথা বলেন। তারা হলেন বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমডি আনিসুর রহমান ও তার সহধর্মিণী। কেবিন থেকে ব্যাগ ফেলে দ্রুত বেরিয়ে নিচে লঞ্চের সামনে চলে আসেন তারা।
এমডি আনিসুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত অনুমানিক ৩টার দিকে লঞ্চে আগুন লাগে। ইঞ্জিনরুম থেকে আগুন দ্রুত পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় পুরো লঞ্চ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় লঞ্চের ডেকে হুড়োহুড়ি শুরু হয়।
প্রাণ বাঁচাতে অনেকে নদীতে ঝাঁপ দেয়। আমরা যারা কেবিনে ঘুমিয়ে ছিলাম, তারা চিৎকার শুনে বের হয়ে চারদিকে ছোটাছুটি করতে থাকি। ধাক্কাধাক্কি ও পদদলিত হয়ে অনেকে আহত হয়। পুরো লঞ্চের যাত্রীরা ডাক-চিৎকার আর আর্তনাদ করতে থাকে। যে যেভাবে পেরেছে নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। অনেকে স্বজনদের রেখেই ঝাঁপ দিয়েছে নদীতে।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যাগ কেবিনে রেখে স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগটি নিয়ে দাড়িয়ে থাকি। দ্রুত আমাদের কাছে অনেক লোক জড়ো হয়। লঞ্চের পিছনে দোতলা ও তৃতীয় তলায় তখন আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আমি প্রথমে আমার বড় ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা রাসেলকে ফোন দিই। তার ফোন বন্ধ পাই। পরে ছোট ছেলেকে ফোন দিয়ে বলি বাবা আমরা বিপদে পরেছি। তোদের সঙ্গে আর আমাদের দেখা নাও হতে পারে। লঞ্চে আগুন লেগেছে।
ওই আইনজীবী বলেন, আস্তে আস্তে লঞ্চটি কিনারে ভেড়ে। আমরা নিরাপদে কিনারে উঠলেও অনেক যাত্রী নদীতে ঝাপ দিয়ে পরে। অনেক যাত্রী নদীতে পরে উল্টোদিক সাঁতার দেয়। আমি কিনারে উঠে বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেনকে ফোনে জানাই। তিনি বরগুনায় পুলিশ সুপার ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছেন। আমরা যারা বেঁচে আছি ওই রাতে ওখানকার ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের একটি স্কুল ঘরে আশ্রয় দেয়। ভোররাতে একটি ট্রলারে আমরা ঝালকাঠি হয়ে বরগুনা আসি।
বরগুনার অভিযান-১০ লঞ্চটি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। রাত সাড়ে ৩টায় ঝালকাঠি পৌঁছলে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটিতে আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় ৪২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।