দেশের ৮৫ ভাগ মানুষের হাতে সম্পদ নেই: ড. দেবপ্রিয়

ফানাম নিউজ
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩:৩৬

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের ৮৫ ভাগ মানুষের হাতে কিছু (সম্পদ) নেই। অথচ ১৫ ভাগ মানুষের হাতে অধিকাংশ সম্পদ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এটা ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আব্দুল গফুর মেমোরিয়াল লেকচার ২০২১-এ এসব কথা বলেন তিনি।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিআইডিএসের সাবেক গবেষক রুশিদান ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রমুখ।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গবেষক গফুর ভাইসহ আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অনেক পরিকল্পনা করেছি এই বিআইডিএসের সম্মেলন কক্ষে বসে। স্বৈরাচা বিরোধী আন্দোলনে আধাসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে বসে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আজকের দিনে সেটি কি সম্ভব? শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অলৌকিক এবং বায়বীয় অবস্থা তৈরির মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করার সুফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের ৮৫ ভাগ মানুষের হাতে কিছু নেই, আর ১৫ ভাগ মানুষের হাতে অধিকাংশ সম্পদ ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে প্রথাগত ভঙ্গুরতার পাশাপাশি করোনা মহামারি নতুন ভঙ্গুরতা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের গড় আয় নিয়ে উচ্ছ্বাস করার কিছু নেই। কেননা বৈষম্যের চিত্র ভিন্ন। মার্কসের ভাষায় শ্রেণিবৈষম্যের পাশাপাশি আরও নানা রকম বৈষম্য আমাদের সমাজে বিরাজমান।

অনুষ্ঠানে ‘মার্কস স্টাডিস ইন বেঙ্গল: সাম ক্রিটিক্যাল রিফ্লেকশনস’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, নাগরিকরা এখন আর স্বপ্ন দেখেন না। নেতা নেত্রীরা স্বপ্ন দেখলেই কেবল তারা স্বপ্ন দেখেন। এছাড়া ব্যক্তির বিকাশ বাধাহীন হলে সমাজে বৈষম্য কমে আসবে।

আলোচনা সভায় মার্কসীয় দর্শন কাজে লাগিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের তাগিদ দেন গবেষকরা। তারা বলেন, একশ্রেণির মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ, আর বড় অংশের হাতে কিছুই থাকবে না- এটা হতে পারে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন করতে হলে বৈষম্য কমাতে হবে। সেই সঙ্গে মার্কস ও লেলিনের ওপর গবেষণা বাড়ানো দরকার।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মার্কসের বিষয়গুলো আরও বেশি বেশি অনুবাদ হওয়া উচিত ছিল। কেন এত কম অনুবাদ হয়েছে সেটিই বড় প্রশ্ন। কার্ল মার্কসের মতো চিন্তার জগতে যারা পথিকৃৎ ছিলেন তাদের খুঁজে বের করে চর্চা করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, আব্দুল গফুর বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তার স্মরণে দুটি লেকচার হয়েছে। এবার তৃতীয়বারের মতো এই লেকচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় মার্কসীয় দর্শন কাজে লাগাতে হবে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মার্কসকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। বাংলাদেশে মার্কসীয় চর্চা বাড়ানো দরকার। তাহলেই বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠান সম্ভব।

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, মার্কসকে জানতে হলে মার্কসের মূল বই পড়তে হবে। মার্কসের নিজস্ব ভাষায় লেখা বই আমরা পড়িনি। ইংরেজিতেও কম পড়েছি। বাংলায় তো বই নেই বললেই চলে।

ড. রুশিদান ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের জন্য মার্কস ও লেলিন চিন্তার প্রয়োগ কীভাবে করা যায় সেজন্য গবেষণা করতে হবে। পুঁজি ও উদ্বৃত্ত উৎপাদনের বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। কেননা ক্ষুদ্র কৃষকরা শোষিত হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে। সমাজতন্ত্র আমাদের মনে আছে, কিন্তু সেটাকে কাজ লাগাতে হবে।

সূত্র: জাগো নিউজ