শিরোনাম
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘ প্রায় ২০ মাস পর শারীরিক উপস্থিতিতে শুরু হলো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচার কার্যক্রম। বুধবার (১ ডিসেম্বর) সকাল নয়টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে এ বিচারকাজ শুরু হয়। একইদিন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকাজও শারীরিক উপস্থিত শুরু হবে।
আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে মর্মে গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
গত বছর মার্চে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় সরকার ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করে। সেই অনুসারে আদালতেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তার আগে সশরীরে সর্বশেষ আপিল বিভাগ বসেছিলো ১২ মার্চ।
এরপর একই বছরের মে মাসে অধ্যাদেশ জারি করা হলে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হয়।
পরবর্তীতে ভাইরাসের প্রকোপ কমতে থাকলে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিম্ন আদালতে পর্যায়ক্রমে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম চালু হয়। এরপর ভার্চুয়ালের পাশাপাশি হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চেও শারীরিক উপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
তবে ২০২০ সালের ১২ মার্চের পর শারীরিক উপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রমে বসেননি আপিল বিভাগ।
এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টে পুরোপুরিভাবে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য গত ২৯ নভেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
তবে আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এজলাসকক্ষে আইনজীবীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের উপস্থিতিতে বলেছেন, ‘আপনারা সবাই ইন টাইম আদালতে থাকবেন।’
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে গত বছর আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিচার বিভাগকে সচল রাখার বহুমাত্রিক প্রয়োজনীয়তায় এক পর্যায়ে ২০২০ সালের ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ- ২০২০’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর দুদিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে সশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে অধ্যাদেশটি জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। গত বছরের ১০ মে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে ১১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশে ভার্চুয়াল আদালতের দুয়ার খুলে দেন সুপ্রিম কোর্ট।
এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর মহামারির এক দুঃসময়ে দেশের বিচার বিভাগ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে। প্রথমে দেশের অধস্তন আদালত, এরপর হাইকোর্ট এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত ও আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম চলতে থাকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
পরে ভার্চুয়ালের পাশাপাশি শারীরিক উপস্থিততে আদালতের কার্যক্রম চলে। পরে আবার দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লে সব আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুরু হয়।
গত ১২ এপ্রিল থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, চেম্বার আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে চলে। এ সময় সপ্তাহে মাত্র তিনদিন আপিল বিভাগ, দুদিন চেম্বার আদালত এবং পর্যায়ক্রমে ১৬টি হাইকোর্ট বেঞ্চে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
গত ১ জুন থেকে সপ্তাহে পাঁচদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ, তিনদিন চেম্বার আদালত ও ২১টি হাইকোর্ট বেঞ্চে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। আর গত ২০ জুন থেকে দেশের সব অধস্তন আদালতে শারীরিক উপস্থিতিতেই বিচারকাজ পরিচালনা শুরু হয়।
সবশেষ গত ২৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ১ ডিসেম্বর থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় (হাইকোর্ট ও আপিল) বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেন।
সূত্র: জাগো নিউজ