শিরোনাম
বিমা কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেতে কোনো স্বীকৃত বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। ফলে এখন থেকে শুধু অক্ষরজ্ঞান (কোনো রকমে লিখতে পড়তে জানা) আছে, এমন ব্যক্তিদের বিমা পেশায় ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এজেন্টদের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক করা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। এতে বিমা পেশায় শিক্ষিতদের আগমন ঘটবে। একই সঙ্গে বিমা খাতের যে ইমেজ সংকট, তাও ধীরে ধীরে দূর হবে। বিমা পেশা পরিণত হবে সম্মানের পেশা হিসেবে।
তারা বলছেন, এতদিন এজেন্ট লাইসেন্সের জন্য অষ্টম শ্রেণি পাস লাগতো। অর্থাৎ, শুধু অক্ষরজ্ঞান আছে এমন ব্যক্তি অনায়াসে বিমা কোম্পানির এজেন্ট হতে পারতেন। আবার এই এজেন্টরাই অনায়াসে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকও হতে পারতেন। কারণ এজেন্ট এবং সিইও’র মাঝের পদগুলোর শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত আইনে নেই। ফলে কোনো রকমে লিখতে পড়তে জানা ব্যক্তি কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ায় বিমা খাতে এক ধরনের ইমেজ সংকট চলছিল।
এবার এ খাতে শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি পাস বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি স্থায়ী বিমা এজেন্ট হতে ন্যূনতম বিমা পলিসি সংগ্রহের শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। জীবন বীমার স্থায়ী এজেন্ট হতে হলে আবেদনকারীকে বছরে কমপক্ষে ১১টি নতুন পলিসি সংগ্রহ করতে হবে। পাশাপাশি নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহের বিপরীতে কমিশন আয় করতে হবে ২০ হাজার টাকা। আর সাধারণ বিমা কোম্পানির স্থায়ী এজেন্ট হতে হলে অস্থায়ী এজেন্ট হিসেবে কাজ করা অবস্থায় কমপক্ষে এক লাখ টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে হবে।
এসব বিধান রেখে সম্প্রতি ‘বিমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা, ২০২১’ নামে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত গেজেটের শর্তানুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ বিমা কোম্পানির এজেন্ট হতে পারবেন না। আবার এজেন্ট লাইসেন্স পেতে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এছাড়া নিতে হবে বাধ্যতামূলক ৭২ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ। এজেন্টের লাইসেন্সের মেয়াদ হবে তিন বছর। যা পরবর্তীসময়ে নবায়ন করা যাবে।
লাইসেন্স নবায়ন করার ক্ষেত্রে লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ৩০ কার্যদিবস আগে নবায়ন ফি পরিশোধ করে আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করতে হবে। এ আবেদন করতে হবে বিমা কোম্পানি বা ব্রোকারের মাধ্যমে। লাইসেন্স নবায়ন করতে বাধ্যতামূলক ৩৬ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নেওয়ার সনদও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি জীবন বীমার এজেন্ট লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের বিপরীতে দ্বিতীয় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়াম সংরক্ষণের হার হতে হবে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ।
প্রথমে বিমা এজেন্ট হতে লাইসেন্সের জন্য এক হাজার ৫শ টাকা ফি দিতে হবে। পরবর্তীসময়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে ফি লাগবে এক হজার টাকা। এছাড়া প্রতিক্ষত্রে তিন মাস পর্যন্ত বিলম্বের জন্য একশ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি মাসের জন্য ৬শ টাকা ফি দিতে হবে। লাইসেন্সের প্রতিলিপির জন্য দিতে হবে একশ টাকা।
এদিকে বর্তমানে যারা বিমার এজেন্ট আছেন তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার নতুন শর্ত কার্যকর হবে না। অর্থাৎ, গেজেট প্রকাশের পর যারা নতুন করে বিমার এজেন্ট হবেন তাদের কমপক্ষে এসএসসি পাস হতে হবে। সে হিসেবে যারা বর্তমানে বিভিন্ন বিমা কোম্পানিতে এজেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন তাদের চাকরির ক্ষেত্রে নতুন প্রবিধানমালা কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।
নাম প্রকাশ না করে একটি বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, এতদিন বিমার এজেন্ট হতে অষ্টম শ্রেণি পাস লাগলো। ফলে কোনো রকমে লিখতে পড়তে জানা ব্যক্তিরা বিমার এজেন্ট হয়ে যেতেন। সিইও ছাড়া বাকি পদগুলোতে শিক্ষাগত যোগ্যতার আর কোনো শর্ত না থাকায় অষ্টম শ্রেণি পাস অনেকে এজেন্ট হিসেবে যোগ দিয়ে এক পর্যায়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকও হয়ে যেতেন। এখনো একাধিক কোম্পানিতে এমন কর্মকর্তা আছেন।
তিনি বলেন, বিমা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এর মূল কারণ শিক্ষিতরা এ পেশায় কম এসেছেন। বিমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির যে অভিযোগ, তার জন্যও এই বিমা এজেন্টদের শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব বড় দায়ী। এখন যেহেতু এজেন্টদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে এসএসসি করা হয়েছে, ফলে আশা করা যায় শিক্ষিতরা এখন এ পেশায় আসবেন। এতে বিমা সম্মানের পেশা হওয়ার পাশাপাশি এ খাতের ইমেজ সংকটও দূর হবে।
প্রগতি লাইফের সিইও মো. জালালুল আজিম এ বিষয়ে বলেন, এজেন্টদের মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এ পেশাকে ভালো পর্যায়ে নিতে হলে শিক্ষিত লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষিতরা না এলে পেশার গুণগত উন্নতি হবে না। এজন্য আমরা মনে করি নতুন এ সিদ্ধান্ত সঠিক। এখন লেখাপড়া জানা লোক বিমা পেশায় আসবেন। এতে বাজারে আমাদের যে নেতিবাচক ইমেজ রয়েছে, সেটা ধীরে ধীরে কাটাতে পারবো।
তিনি বলেন, এজেন্টদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ন্যূনতম পলিসি বিক্রির যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক। তবে আগে এজেন্ট লাইসেন্সের জন্য ফি ছিল ২৩০ টাকা, এখন সেটা এক হাজার ৫শ টাকা করা হয়েছে। এটা প্রথম এজেন্ট হিসেবে যারা কাজ করতে চান তাদের কিছুটা নিরুৎসাহিত করবে। কারণ, এ পেশায় সহজে কেউ কাজ করতে চায় না।
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও এস এম নুরুজ্জামান বলেন, এজেন্টদের এসএসসি পাস বাধ্যতামূলক করা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। এতে শিক্ষিতরা বিমা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন। আর শিক্ষিতরা এ পেশায় এলে বিমা খাতের ইমেজ সংকট দূর হবে। কমবে গ্রাহক হয়রাানিও।
তিনি বলেন, বিমা পলিসি বিক্রির মূল দায়িত্ব পালন করেন এজেন্টরা। এজেন্টরা শিক্ষিত না হলে তারা পলিসির বিষয়ে গ্রহকদের সঠিক ধারণা দিতে পারেন না। ফলে বিমা পলিসির বিষয়ে গ্রাহকদের কাছে ভুল বার্তা যায়। এখন শিক্ষিতদের এ খাতে অন্তর্ভুক্তি পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবে।
সূত্র: জাগো নিউজ