শিরোনাম
গাজীপুর মহানগরীতে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থিত নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২৪ নভেম্বর) গাজীপুর মহানগরীর দুটি স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
মেয়র বিরোধীদের রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় অনেকে বাসা থেকেও বের হচ্ছেন না। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নগরজুড়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেন মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।
সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা হামলার আশঙ্কা করছিলেন অনেকে। মেয়র জাহাঙ্গীর বহিষ্কারের পর তার সমর্থিতরা অনেকটা কোণঠাসা থাকলেও বুধবার মেয়র সমর্থিত দুই নেতা হামলার শিকার হলে অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার দুপুরে নগরীর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব আবুল হোসেনকে মারধরের ঘটনায় ঘটে। কয়েকজন যুবক ও কিশোর তাকে ঘিরে ধরে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারেন।
এ বিষয়ে জানতে আবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি লাঞ্ছিতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে স্বীকার করে বলেন, ‘মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে বলিনি। এখনতো হামলাকারীরা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘গত সোমবার ভরান এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য মিম আমার দোকানে এসে খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যান। এসময় পাশের সেলুনে এক কাস্টমারকেও চড়-থাপ্পড় দিয়ে চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেন মিম। বিষয়টি দেখে আমি তাকে বুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেই। কিন্তু বুধবার দুপুরে জোহরের নামাজের পর মধুমিতা মেগা সিটির সামনে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান খান হৃদয় ও আকাশের নেতৃত্বে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। প্রথমে মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু জানাইনি। কিন্তু এখন জানাজানি হওয়ার পর আমি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে থানায় এসেছি।’
জাহাঙ্গীর অনুসারী বলেই কি আপনার ওপর হামলা হয়েছে, এমন প্রশ্নে আবুল হোসেন বলেন, ‘আজমত উল্লাহ খানের কাছ থেকে আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। জাহাঙ্গীর আলম দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি এখনও মেয়র। তিনি আমার ছেলেকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন। সেই সুবাদে তার কাছে যেতাম। তাকে বহিষ্কার করার পর তার সঙ্গে আমাদের দলীয় কোনো সম্পর্ক নেই।’
আক্ষেপের সুরে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘একসময় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেছি। এখন আওয়ামী লীগ করছি। কখনও এমন অপদস্ত হইনি। কিন্তু আজ আমার ওপর তারা কেন হামলা করলো বুঝতে পারছি না।’
অভিযুক্ত ইমরান খান হৃদয় গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের ভাতিজা। জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান খান হৃদয় বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। ঘটনার সময় আমি বাসার সামনের ভরান মসজিদে ছিলাম। ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’
এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে গাজীপুর মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউলতিয়া সাংগঠনিক থানা যুবলীগের নেতা মতিউর রহমান মতিনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা বাসার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আলমারি, শো-কেসসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। তিনি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক বলে জানা গেছে।
মতিউর রহমান মতিন গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন আহমেদ শান্ত বাবুর অনুসারী ও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সমর্থক। তিনি কাউলতিয়া সাংগঠনিক থানা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী।
মতিন অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাকে না পেয়ে বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে মহানগরীর জোলারপাড় এলাকায় তার বাড়িতে একদল লোক গিয়ে তাকে খোঁজ করে না পেয়ে এ হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে চলে যান। ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের লোকজন আতঙ্কিত। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সূত্র: জাগো নিউজ